ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

আহত ব্যক্তিকে আটক: সরিষাবাড়ী থানার ৪ পুলিশ বরখাস্ত, ২ জন ক্লোজড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
আহত ব্যক্তিকে আটক: সরিষাবাড়ী থানার ৪ পুলিশ বরখাস্ত, ২ জন ক্লোজড

জামালপুর: জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বসতভিটার জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্ষুকের পরিবারকে উল্টো মামলায় জড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। মামলার পর হাসপাতাল থেকে ওই ভিক্ষুককে আটক করে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চার পুলিশকে বরখাস্ত ও দুইজনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

পাশাপাশি ভিক্ষুক পরিবারের পক্ষে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জামালপুর পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ।  

মঙ্গলবার (১০ মে) রাতে জামালপুর পুলিশ সুপার (এসপি) নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বরখাস্ত ও ক্লোজডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সরিষাবাড়ী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আলতাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী, মুনতাজ আলী। এছাড়াও বাকি দুই পুলিশ সদস্য মোজাম্মেল হক ও মহিলা পুলিশ সদস্য সাথী আক্তারকে ক্লোজড করে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত ভিক্ষুক ও তার পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের আসামি করায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও টেনে হিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে হাজতে পাঠায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসিবাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬৪) ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি ওই জমি তার দাবি করায় দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত আব্দুল জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় রামদা, লোহার রড ও লাঠিসোটার আঘাতে আব্দুল জলিলসহ পরিবারের সবাই আহত হন। গুরুতর আহত আহত আব্দুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেঝো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি (২৫), ছোট ছেলে হামদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে ঘটনার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন চারজনসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত চার আসামিকে আটক করে পুলিশ। হাসপাতালের শয্যা থেকে পুলিশ তাদের চ্যাংদোলা করে নামিয়ে হাত-মুখ চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় নিয়ে যায়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাখানেক তাদের থানাহাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আব্দুল জলিলের জামাতা চান মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া অভিযোগ করেন, হামলার পর তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আব্দুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে উল্টো অভিযুক্তদের মামলা নিয়ে হাসপাতাল থেকে তাকে আটক করা হয়।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনে হিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে৷ নইলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জানান, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামিদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।