ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৌদি থেকে শরীফের মরদেহ দেশে আনতে চান তার বাবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
সৌদি থেকে শরীফের মরদেহ দেশে আনতে চান তার বাবা শরীফ হোসেন

লক্ষ্মীপুর: কয়েকমাস আগে সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে শরীফ হোসেন (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এখন ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন শরীফের বাবা।

শরীফের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের জাজিরা এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মো. সিরাজের ছেলে।

তার বাবা বলেন, সৌদি প্রবাসী প্রতিবেশী আলাউদ্দিনের মাধ্যমে আমার ছেলেকে সৌদি পাঠাই। তার সঙ্গে আমাদের ফোনে কথা হতো। সর্বশেষ প্রায় তিন মাস আগে আমার ছেলে আমাকে সকালে এবং দুপুরে ফোন দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছে। ওইদিন রাতে সেদেশে থাকা অন্য একজন আমাদের ফোনে জানায় শরীফের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথমে মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দিন একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট পাঠায়। তাতে গলায় ফাঁস লেগে আমার ছেলের মৃত্যু হয়ে বলে উল্লেখ রয়েছে।

শরীফের পিতার অভিযোগ- তার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং শরীফের মরদেহ দেশে আনার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবারে একটি আবেদন করেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭ মাস আগে কমলনগরের হাজিরহাট ইউনিয়নের সৌদি আরবে কর্মরত আলাউদ্দিনের মাধ্যমে খেজুরের বাগানে কাজ করার জন্য ওই দেশে যান শরীফ। তাকে খেজুরের বাগানে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও কাজ দিয়েছেন একটি কসাইখানায় (মাংসের দোকান)।

শরীফ তার পরিবারের কাছে তখন অভিযোগ করেছে- মাংসের দোকানের মালিক তাকে প্রায় মারধর করতো। বিষয়টি শরীফের বাবা সিরাজ সৌদিতে থাকা আলাউদ্দিনকে মোবাইল ফোনে জানালে সে কোন গুরুত্ব দেয়নি।

এ ঘটনায় চলতি বছরের ৮মার্চ শরীফের বাবা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কমলনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে থানায় একটি বৈঠক হয়। সে বৈঠকে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে শরীফের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আলাউদ্দিনকে চাপ দেওয়া হয়। এর কয়েকদিন পর আলাউদ্দিন ফের সৌদিতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে শরীফের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

নিহত শরীফের বাবা মো. সিরাজ বলেন, ধারদেনা করে ছেলেকে সৌদিতে পাঠিয়েছি। খেজুরের বাগানে কাজ দেওয়ার কথা থাকলে তাকে কসাইয়ের দোকানে চাকরি দেয় আলাউদ্দিন। ওই মালিক প্রায় আমার ছেলেকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি আলাউদ্দিনকে জানালে তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। এখন শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার ও আমার ছেলের মরদেহ দেশে আনতে চাই।  

এদিকে আলাউদ্দিনের স্ত্রী ফেরদাউস বেগম তার স্বামীর বরাত দিয়ে বলেন, সৌদি থেকে মরদেহ ফেরত পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু স্থানীয় চেয়ারম্যানের একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠালে মরদেহ দ্রুত চলে আসবে।  

শরীফ প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন জানিয়ে আলাউদ্দিনের স্ত্রী বলেন, শরীফের সঙ্গে এলাকায় এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়ে আরেক ছেলের সঙ্গে ছবি তুলে শরীফকে পাঠালে ক্ষোভে তিনি আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি এলাকার সবাই জানেন।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমার কাছে শরীফ নামে এক যুবকের মরদেহ সৌদি আরব থেকে দেশে আনার বিষয়ে আবেদন করেছেন তার বাবা। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।