ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

অনুদানের ঘরের প্রলোভন, বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
অনুদানের ঘরের প্রলোভন, বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা!

খুলনা: অনুদানের ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে খুলনায় বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। কখনো প্রধানমন্ত্রীর উপহার, আবার কখনো এনজিওর অনুদানের কথা বলে গ্রামের সহজ সরল গরীব মানুষের কাছ থেকে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

এদিকে প্রায় চার বছর ধরে টাকা প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। তবে কোনো লাভ হয়নি। প্রতারকচক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ, কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস পান না।

ঘটনাটি খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের। এদিকে জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আর ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা যায়, জেলার তেরখাদা গ্রামের কালিপদ বালার ছেলে বিশঙ্ক বালা এবং সুনীল বালার মেয়ে হীরা বালা বেশ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদানের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার সময় তাদের বলা হয়েছিল এই টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বা এনজিওর অনুদানের পাকা ঘর দেওয়া হবে। প্রথমদিকে ঘর প্রত্যাশীরা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করলেও বিশঙ্ক বালার ভাই শংকর বালা এবং হীরা বালার বাবা সুনীল বালার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা টাকা দেন। সুনীল বালা, শংকর বালা, বিশঙ্ক বালা ও হীরা বালা একই পরিবারের বাসিন্দা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ১৪ জন নারী-পুরুষের কাছ থেকে এভাবে মোট ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ২২ হাজার এবং সর্বোচ্ছ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রদীপ রায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, গুরুদাস মজুমদারের কাছ থেকে ২২ হাজার, বিষ্ণপদ বিশ্বাসের কাছ থেকে ২৫ হাজার, কিশোর মল্লিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার, কানন গাইনের কাছ থেকে ৫৮ হাজার, মনিলা মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, গোপাল বালার কাছ থেকে ২২ হাজার, সুতিসনা বসুর কাছ থেকে ৪০ হাজার, স্বপন বিশ্বাসের কাছ থেকে ২৫ হাজার, কালিদাসি মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, সুব্রত মজুমদারের কাছ থেকে ২৫ হাজার, প্রদীপ রায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, রমলা মল্লিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার, বিচরণ বালার কাছ থেকে ২২ হাজার এবং রবিদাসী গাইনের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।

চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা সবাই তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ বিষয়ে কিশোর মল্লিক জানান, তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা নেয়ার সময় বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের পাকা ঘর করে দেয়া হবে। তিনি বিশঙ্ক বা হীরার কথায় টাকা দিতে রাজী না থাকায় সুনীল বালা ও শংকর বালার আশ্বাসের পর টাকা দেন। কিশোর জানান, প্রায় ৫ বছর হয়ে গেল এখনও টাকা ফেরত পাইনি। কোনো উপায় না দেখে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকের কাছে টাকা ফেরত ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।

স্থানীয় আজগড়া ইউপি সদস্য অপূর্ব কুমার মল্লিক জানান, একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ঘর দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। গত ১২জুন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আমিও খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে যাই অভিযোগ করতে। আশা করি এবার প্রতারকচক্র শাস্তির আওতায় আসবে এবং ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পাবেন।

সুনীল বালা বাংলানিউজকে বলেন, ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ জড়িত নই।

খুলনার জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।