ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অন্ধকারে নিমজ্জিত সিলেট, ভরসা মোমের আলো 

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
অন্ধকারে নিমজ্জিত সিলেট, ভরসা মোমের আলো 

সিলেট: দুপুর থেকেই বিদ্যুৎহীন। ফলে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

এতে একমাত্র ভরসার কেন্দ্র মোমের আলো। তবে সে মোমের সংকট দেখা দিয়েছে সিলেটে। যেসব দোকানে মোমের মজুদ আছে, তা চড়া দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

এমন অভিযোগ এনে মোহাম্মদ মারুফ হোসেন সামাজিকমাধ্যমে লেখেন, ‘১০ টাকার মোমবাতি ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০০/৫০০ টাকার নৌকা ভাড়া ৪০-৫০ হাজার। ১০০ টাকার সিএনজি ভাড়া ১০০০ হাজার। এই দেশে অমানুষের জন্ম হয়েছে। ’ সব কি এতোই সোজা, দিন সবার আসবে। আরো বেশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। তার সঙ্গে নৌকাসহ যা কিছু দরকার, তা নিয়ে মানুষদের উদ্ধার করার জন্য যান। সরকারিভাবে তাদের জন্য আলাদাভাবে বাজেট পেশ করা হোক।

সিলেটের সাংবাদিক তালুকদার আনোয়ারুল পারভেজ বলেন, সুনামগঞ্জ থাকা তার স্বজনদের কোনো খোঁজ না পেয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। একটি ট্রলার চালককে ৫০ হাজার টাকা শোনালেও যেতে রাজি হয়নি।

এদিকে বিগত শত বছরের সব রেকর্ড ভেঙেছে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা হলেও সিলেটে শাহজালাল মাজার গেট ও বাংলাদেশ বেতার সংলগ্ন ভিআইপি রোডে বন্যার পানি হয়নি কখনো। এবার সেসব এলাকাও ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় বিকাল ৩টা ৪৩ মিনিট থেকে সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়ও পানি প্রবেশ করে। আর বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীরা পড়েন বিড়ম্বনায়।  

এবারের বন্যা পরিস্থিতি স্মরণকালের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলে জানান ভোক্তভুগীরা। এ সব স্থানে এখন কোমর থেকেও বেশি পানি উঠেছে। পানি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এতে জনজীবনে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন, সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্য ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে শুক্রবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত থেকেই এক নাগাড়ে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বৃষ্টি না থামায় এবং ভারতের রাজ্যগুলো থেকে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের পাশাপাশি সিলেটের ৮০ শতাংশ জায়গায় তলিয়ে গেছে। ফলে সর্বশেষ আশ্রয় স্থলটাও হারাতে বসছে এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত একালাগুলো থেকে বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ডুবুরিদল, হেলিকপ্টার ও কোস্ট গার্ডের ক্রুজ।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নৌবাহিনীর একটি দল জালালাবাদ ইউনিয়ন এলাকায়, আরেকটি দল কোম্পানীগঞ্জে উদ্ধার কাজ করছে। এছাড়া সেবাবাহিনী সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এলাকায় উদ্ধার কাজ চালিয়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে উদ্ধার তৎপরতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সাধারন মানুষ।

আবির নামের এক যুবক বাংলানিউজকে জানান, আমি গতকাল সিলেট ত্যাগ করেছি। তবে মনটা সিলেটেই পড়ে রইল। সিলেটের মানুষজন কেমন আছে? কি করছে? কি বা খাচ্ছে? বন্ধুু-বান্ধব, পরিচিত কারোর সঙ্গেই কোন ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।  পুরো সিলেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আল্লাহ সিলেটের মানুষকে রক্ষা করুক।

এদিকে সিলেট বাস স্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশন বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সকাল থেকে সারাদেশের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেটের বর্তমান বন্যার ভয়াবহতা আরো বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকায় প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে শুধুমাত্র প্রাণে বাঁচার আর্তনাদ জানাচ্ছে মানুষগুলো। বন্যা কবলিত অনেক এলাকায় মানুষজন গবাদি পশু ও স্বীয় সম্পদ রেখে প্লাবিত এলাকা ছাড়তে চাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এনইউ/এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।