ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৩০ মে ২০২৪, ২১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন বোয়ালমারীর ইউএনও, হাইকোর্টের ভর্ৎসনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন বোয়ালমারীর ইউএনও, হাইকোর্টের ভর্ৎসনা

ঢাকা: আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকির ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম।

এরপর হাইকোর্ট তাকে ভর্ৎসনা করে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৬ জুন আদেশের দিন রেখেছেন।

আদালতে ইউএনও এবং তার অফিস সহকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, আইনজীবী শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

‘ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ’ মামলাটি ফরিদপুরের বোয়ালমারী জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার নোটিশ জারির জন্য ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান।

ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে নোটিশটি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু নোটিশ গ্রহণ না করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে অপেক্ষায় রাখেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও যখন কেউ নোটিশ গ্রহণ করছিল না, তখন জারিকারকরা চলে আসার জন্য উদ্যত হন এবং নোটিশ গ্রহণ না করার বিষয়টি আদলতকে জানাবেন বলে জানান।

এরপর অফিস সহকারী উকিল হোসেনের সঙ্গে জারিকারকদের তর্কাতর্কিও হয়। এক পর্যায়ে উকিল হোসেন নোটিশটি বুঝে নেন। অফিসের এক কর্মচারী বিষয়টি ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে জানালে তিনি জরিকারকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে দেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা এ সংক্রান্ত খবরে জানা যায়, অফিস স্টাফদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ইউএনও জারিকারকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি ইউএনও জারিকারকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে বলেন। শেষ পর্যন্ত জোর করে মুচলেকা নিয়ে দুই জারিকারককে ছাড়েন ইউএনও।

পরে হয়রানির এ ঘটনা সমন জারিকারী বিচারক ও ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজকে লিখিতভাবে জানান। পরে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের বিচারক ইউএনও’র কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। পরে ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি লেখেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ। সেই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠান। এরপর গত ৭ জুন বিষয়টি হাইকোর্টে উঠলে ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে কারণ দর্শাতেও বলা হয়।

মঙ্গলবার তলবে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম ও তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী উকিল হোসেন।

এরপর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রেজাউল করিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাকে ক্ষমা করলে আমরা আটকে যাব। আদালত সবার উপরে। আদালতের আদেশ সবার মানতে হবে। আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আদালতের সমন নিয়ে নোটিশ জারিকারক আপনাদের কাছে গিয়েছিল। আপনার উচিত ছিল তাকে ধন্যবাদ দেওয়া। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন! কত অজুহাত দেখালেন। আপনি যে আচরণ করলেন তা সভ্য রাষ্ট্রে কলঙ্ক হয়ে লেগে থাকবে। আপনি একটা ছোট বিষয় সামলাতে পারেন না, জনসেবা করবেন কীভাবে?’

আদালত আরও বলেন, ‘একটি কথা মনে রাখবেন আইন আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান। আপনি যদি আইন না মানেন, আদালত না মানেন, আপনাকেও মানবে না কেউ। আপনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করছেন। আদালত অবমানার অভিযোগ নিয়ে আদালতে আসতে হয়েছে আপনাকে। মনে রাখবেন আপনার ক্যারিয়ারে একটি দাগ পড়ে গেল। আমরা যদি একটি লাইন লেখে দেই আপনার ক্যারিয়ার ধংস হয়ে যাবে। ’

অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনি মূল অপরাধী। আপনি সিনক্রিয়েট করেছেন। খুব ভয়ঙ্করভাবে মিসগাইড (বিভ্রান্ত) করেছেন। ’

এক পর্যায়ে আদালত ইউএনওকে ভবিষ্যতে এ ধরণের আচরণ ও দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি সতর্ক থাকার কথা বলেন। পরে আদালত  ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস নাজির উকিল হেসেনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুলে আদেশের জন্য আগামী ২৬ জুন দিন নির্ধারণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।