ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ডেকে যাত্রী থাকলেও কেবিনে উল্টো চিত্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
ডেকে যাত্রী থাকলেও কেবিনে উল্টো চিত্র

বরিশাল: উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার প্রথম দিন রাতে বরিশাল থেকে যথা নিয়মে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে গেছে লঞ্চগুলো। লঞ্চগুলোর ডেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো যাত্রী থাকলেও কেবিনগুলো অনেকটাই ছিল ফাঁকা।

নৌযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত রোববার থেকে আজ রোববার প্রতিটি লঞ্চেই কেবিনের যাত্রী অনেক কম। তবে দু-একদিনের হিসেব কষে লঞ্চের যাত্রী কমেছে বলা ঠিক হবে না, এটা বুঝতে মাস খানেকের মতো সময় লাগবে।

যদিও যাত্রী ধরে রাখতে সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি ভাড়া কমানোর গুঞ্জন এরইমধ্যে শোনা গেছে নৌ-শ্রমিকদের কাছ থেকে। বরিশাল-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল একটি লঞ্চের স্টাফ তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনেই আজ বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চের কেবিনে যাত্রী অনেকটাই কম। ফলে প্রতিটি লঞ্চেই একটা বড় সংখ্যায় কেবিন খালি রয়েছে। আর ডেকের যাত্রী স্বাভাবিক থাকলেও তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে অনেকটাই কম অর্থাৎ আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এমন সময়টাতে ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, ফোন ধরতে ধরতে কান ব্যথা হয়ে যেত। কিন্তু এবার এখনও সেরকমটা ঘটেনি। আর এসব মিলিয়ে এরইমধ্যে মালিকরা লঞ্চের ভাড়া কমানোর চিন্তা করেছেন। যেকোনো মুহূর্তে লঞ্চের কেবিন ও ডেকের ভাড়া কমার ঘোষণাও আসতে পারে।

এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কাউন্টার ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, সপ্তাহের বৃহষ্পতি, শুক্র ও শনিবারের হিসেব আলাদা। আর রোববার থেকে বুধবারে প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রী কম থাকে। অর্থাৎ এ সময়টাতে ডেক, সোফা ও কেবিনের যাত্রী কম থাকে। তবে আজ কেবিনের যাত্রী অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

যদিও এমভি সুন্দরবন লঞ্চ কাউন্টার ম্যানেজার জাকির হোসেনের মতে সড়কের সঙ্গে লঞ্চের যাত্রীর হিসেব কষলে হবে না। লঞ্চে ডেকের যাত্রীরা শুয়ে-বসে ২ থেকে ৩শ’ টাকার মধ্যে ঢাকায় যেতে পারেন। আর এসব যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাসে  যাবেন না। আবার লঞ্চের কেবিনে যারা যান তাদের হিসেবও আলাদা। রাতের বেলা কেবিনে ঘুমিয়ে যাওয়াটা সব থেকে বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক এসব যাত্রীর কাছে। সুতরাং এখনই আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। যাত্রী নৌপথে আদৌ কমবে কিনা তা আসন্ন ঈদের ছুটির পরে বোঝা যাবে। যারা বলছে যাত্রী কমেছে তারা ভুল বলছেন, কারণ ঈদের আগ মুহূর্তে এ সময়টাতে বরিশাল থেকে সব সময় যাত্রী কম থাকে।

এদিকে আজ বরিশাল নদীবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়া যাত্রীরা বলছেন, মাত্র একদিনে লঞ্চের স্টাফদের ব্যবহারে বেশ পরিবর্তন এসেছে। লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে যাত্রীদের ভেতরে নিচ্ছেন। এসব অফারের মধ্যে লঞ্চের ডেকের ভাড়া কম, সোফা-সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন খালি থাকার বিষয়। আগে পৌঁছানো এবং লঞ্চ বড় হওয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। তবে গেল সপ্তাহে এ চিত্র উল্টো ছিল। প্রভাবশালীদের তদ্বির ছাড়া কেবিন পাওয়া যেত না। ডেকের ভাড়া ৩ থেকে ৪শ’ টাকার নিচে নেওয়া হতো না।

আকাশ নামে এক যাত্রী বলেন, আজ ঢাকায় যাওয়ার জন্য সুন্দরবন লঞ্চে একটি সোফা আগে থেকেই কেটে রেখেছিলাম। তবে লঞ্চে উঠে সোফার জায়গাটি পছন্দ না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বলার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে দিয়েছেন। কিন্তু অন্যদিন হলে কিছু করার নেই বলে দিত। আবার দেখলাম অনেক কেবিনও ফাঁকা। রাত সোয়া ৮টায় ঘাটে এসেও অনেকে কেবিন পেয়েছেন। যেটা আগের দিনগুলোতে হলে সম্ভব ছিল না। কারণ বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চের কেবিন মানেই সোনার হরিণ।

অপরদিকে সীমা নামে এক যাত্রী বলেন, আজ ঘাটে এসেই লঞ্চ স্টাফদের হাক-ডাক দেখতে পেয়ে অন্যরকম মনে হয়েছে। সব লঞ্চেই বিভিন্ন কথা বলে যাত্রীদের ওঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে ভালো লেগেছে, আমি ডেকের যাত্রী হলেও স্টাফরা সঙ্গে থাকা ব্যাগটি লঞ্চের ভেতরে দিয়ে গেছে। যেটা আগে কখনও আমার সঙ্গে ঘটেনি।

আবার কেবিনের যাত্রীরা জানান, গত সপ্তাহ থেকে আজ কমপক্ষে দুইশ টাকা কেবিন প্রতি কমানো হয়েছে। যেমন ২৪শ’ টাকার ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকায় মিলছে, ১৪শ’ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা লঞ্চ ভেদে মিলছে। আর ডেকের ভাড়াও লঞ্চ ভেদে এক থেকে দেড়শ টাকা কম বলা হচ্ছে।

বরিশাল নদীবন্দর সূত্র বলছে, রোববার বরিশাল নদী বন্দর থেকে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১, কুয়াকাটা-২, সুন্দরবন-১১, সুরভী-৭, পারাবত-১২ ও পারাবত-৯ লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ লঞ্চের অর্ধেক কেবিনও বিক্রি হয়নি।

বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, লঞ্চে কিছু সংখ্যক যাত্রী কমতে পারে, তবে তাও কেবিনের কিন্তু ডেকের যাত্রী কমার সম্ভাবনা নেই। যদিও সার্বিকভাবে লঞ্চের যাত্রী কমবে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।