সিলেট: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ।
গত ১৫ জুন থেকে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া উপদ্রুত এলাকার লোকজনের আর্তি ছিল প্রাণে বাঁচার।
দুর্বিপাকে পড়া লোকজনকে সর্বস্ব হারাতে হয়েছে সর্বগ্রাসী বন্যায়। তাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি গৃহপালিত প্রাণী হারিয়েছেন। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার একর চারণভূমি। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে গোখাদ্য-ঘাস, খড়। ক্ষতি ও সংকটে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।
রোববার (২৬ জুন) পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ খাতে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
সিলেট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রুস্তুম আলী বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার কারণে গোখাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল, ভুষি না থাকা এবং বন্যা কবলিত এলাকায় গোচারণ ভূমি তলিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ যাবত ১১টি গরু-মহিষ মারা যাওয়ার খবর এসেছে।
তিনি বলেন, সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া গবাদিপশুর মড়ক ঠেকাতে টিকাদান ও চিকিৎসায় টিম নামানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের বন্যায় সিলেট জেলায় প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাই তলিয়ে যায়। বন্যার পানিতে হাজার হাজার হাঁস-মুরগি এবং বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল মারা পড়েছে। বন্যায় সাত হাজার ৩৫৪ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। এখনও চারণভূমি তলিয়ে আছে পানিতে। এছাড়া সিলেটে ৭২১টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ছয় কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৩৬৮টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়।
বন্যায় সিলেট জেলায় দুই হাজার ৯১ মেট্রিক টন খড় বিনষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। আর ২ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন ঘাস পচে বিনষ্ট হয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে বন্যায় সিলেটে ১১টি গরু, ৬টি মহিষ, ২১টি ছাগল ও ১৬টি ভেড়া, ৪ হাজার ৯৬৩টি মোরগ, ১ হাজার ২৮৪টি হাঁস মারা গেছে। এক্ষেত্রে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় রোগাক্রান্ত ৯ হাজার ১৫৪টি গবাদিপশু এবং ১২ হাজারের বেশি হাঁস-মুরগিকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
খামারি ও কৃষকরা জানান, বন্যায় গোচারণভূমি এখনও পানিতে নিমজ্জিত। ফলে গবাদিপশু নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। মানুষের যেখানে বাঁচা দায়, সেখানে গোখাদ্য সংকট কীভাবে কাটাবেন, সেই ভাবনায় রয়েছেন অনেকে। তবে হাওর এলাকায় কচুরিপানা খাইয়ে গবাদিপশুকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
এনইউ/কেএআর