ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেকে পেটে ব্যথা নিয়ে অপেক্ষারত অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
ঢামেকে পেটে ব্যথা নিয়ে অপেক্ষারত অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও সুমি বেগম (২৮) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পাঠানো হয় বহির্বিভাগের রেডিওলজি বিভাগে। সেই আল্ট্রাসনোগ্রাম কক্ষের সামনে অপেক্ষারত সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুমি বেগম মারা যান।

তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন।

সোমবার (২৮ জুন) গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে পেটে ব্যথার কারণে সুমি বেগমকে ভোর ৬টার দিকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যায় স্বজনরা।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেয়। সেই মোতাবেক ওয়ার্ডের কয়েকজনের নির্দেশক্রমে স্বজনরা ট্রলিতে থাকা রোগীকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচতলায় বহির্বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষারত সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুমির পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ফের নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মারা যান।

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার এক অংশের ওয়ার্ড মাস্টার শরিফুল বলেন, ভোর বেলায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী পেটে ব্যথা নিয়ে গাইনি ওয়ার্ডে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে দেখে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। পরে রোগিকে ট্রলিতে করে হাসপাতালের বহির্বিভাগ রেডিওলজি বিভাগে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে নিয়ে যাযওয়া হয়। সেখানেও রোগীকে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। কারণ রেডিওলজি বিভাগের সকল পরীক্ষা সকাল ৮টায় সময় শুরু হয়।

সুমির মামা মনিরুল ইসলাম জানান, সুমির স্বামী প্রবাসী সুমন চৌধুরী আরব আমিরাত থাকেন। গত ৮ থেকে ৯ মাস আগে দেশে এসেছিলেন, কিছু দিন থেকে আবার চলে যান। গাজীপুর জয়দেবপুর দাক্ষিণখান ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় জামাই শ্বশুর মিলে একটি বাড়ি করেছে। সেখানেই দু’সন্তান নিয়ে থাকতো সুমি।

তিনি আরও জানান, সুমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী জরুরি বিভাগ থেকে গাইনি বিভাগ ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের রেফার করা হয় সুমিকে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে লিখে দেন। পরে সুমিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আল্ট্রাসনোগ্রামে কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় সুমির ব্যথা উঠলে আবারও তাকে ২১২ নাম্বার ওয়ার্ডের নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এ বিষয়ে আপনাদের কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার ভাগ্নির মৃত্যুর ব্যাপারে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
তবে হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র আছে। সেখানেই জরুরি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা যেকোনো নারীর অবস্থা গুরুতর হলে ২১২ গাইনি ওয়ার্ডেই আল্ট্রাসনোগ্রাম করার নিয়ম আছে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের (ইনচার্জ) সিনিয়র স্টাফ নার্স রওশন আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ভালো আছে। গত ১৫ দিন আগে সেটা নষ্ট ছিল। মেরামতের পর সেটা এখন রানিং আছে।

তিনি আরও বলেন, রোগীকে কোথায় আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে সেটা চিকিৎসক ভালো বলতে পারে। আমরা চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে কাজ করি। একটা ওষুধ খাওয়াতে হলেও চিকিৎসকের কাগজ দেখে তারপরে খাওয়ানো হয় রোগীকে।

ঢামেকের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমা হক বলেন, বেদনাদায়ক একটি খবর শুনলাম। বিস্তারিত এখনও কিছুই জানিনা। সবকিছু না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লগ থেকে এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ড বয়সহ যারা যারা আছেন, ওয়ার্ডে তাদের সবাই একসঙ্গে একটি টিম ওয়ার্কে কাজ করার কথা। অন্তঃসত্ত্বা নারী ওয়ার্ড থেকে কোথায় যাচ্ছে পরীক্ষা করাতে এটা কিন্তু সবার জানা উচিৎ। এ ঘটনা শোনার পর বোঝা যাচ্ছে, সেই টিম ওয়ার্কে ঘাটতি আছে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ ওই নারীর মামা মনিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে সব নিয়ম কানুন মেনে দুপুরের দিকে তার ভাগ্নি সুমির মরদেহ গাজীপুর এলাকায় নেওয়া হয়েছে দাফনের জন্য। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত্যুর সনদপত্রে সকাল সাড়ে নয়টায় মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এজেডএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।