ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

হোজির নদী দখল করে আ. লীগ নেতাদের মাছ চাষ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বাগেরহাট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
হোজির নদী দখল করে আ. লীগ নেতাদের মাছ চাষ!

বাগেরহাট : প্রবহমান হোজির নদী দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী অংশের ছয় কিলোমিটার জুড়ে মাছ চাষ করছেন তারা।

জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০/২৫ জন নেতাকর্মী সমন্বিতভাবে এ নদীতে মাছ চাষ করেন। তাদের ভাষ্য, সরকার কখনও মাছ চাষে নিষেধ করেনি। তাই তারা নদীতে মাছ চাষ করছেন। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সরকার মাছ চাষে নিষেধ না করলেও নদী দখল করতে বলেনি। এর প্রতিকার দাবি করেছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে নদী দখলমুক্ত করা হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাট-রামপাল সড়কের ডেমা ইউনিয়নের হোজির ব্রিজের দক্ষিণ দিকে খেগরাঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ও ব্রিজ থেকে উত্তর দিকে বৈটেঘাটা পর্যন্ত প্রায় ৩ কি.মি. নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের নিচে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এর ওপর আবার খুপরি ঘর বানিয়ে চাষের খাবারসহ বিভিন্ন মালামাল রাখা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি জায়গায় নেট দেওয়া রয়েছে।

বাঁধের ছবি তোলার সময় ঘের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিতরা এগিয়ে আসেন। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে তাদের কাছে নিজের পরিচয় দেন এ প্রতিনিধি। পরে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলতে রাজি হন। জানান, ব্রিজের নিচের বাঁধ দিয়ে নদীকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্রিজের দুই পাশেই মাছ চাষ করা হয়।

তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের লোকজন মাছ চাষ করে। এখানে সাধারণ মানুষের বলার কিছু নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেমা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সহ-সভাপতি ফরহাদ শেখ, ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নকিব হাই, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ফকিরের নেতৃত্বে নদীতে মাছ চাষ করা হয়। ২০/২৫ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এখানে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত।

খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, শুধু আমি একা এ নদীতে মাছ চাষ করি না। প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে মাছ চাষ করা হয়। যে সরকার যে সময় আসে সেই সরকারের লোকজন এখানে মাছ চাষ করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা ঘের করা শুরু করি। আমার সাথে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছেন। এ মৌসুমে আমরা প্রায় ৭ লাখ টাকার গলদা, বাগদা, রুই ও কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছেড়েছি।

সরকারি খাল দখল করে ঘের করা অপরাধ। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে তারপরও কেন বিষয়টি মানা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ কখনও আমাদের খাল দখল করে ঘের করতে নিষেধ করেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করার বিষয়টি আমি জানি না।

হোজির নদী দখলের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনি মল্লিক বলেন, নদী দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ ঘের দখল করে থাকে সেটা তাদের দায়িত্ব। এখানে আমার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি খাল মুক্ত করার জন্য আমরা মাইকিং করেছিলাম। কিছু কাজও হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাটের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, নদ-নদী রক্ষার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় রয়েছে। প্রতিটি জেলায় দখলদারদের তালিকা করার নির্দেশনাও রয়েছে ওই রায়ে। এর পরেও কেউ কেউ প্রবহমান নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। পাশাপাশি খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণেরও ঘটনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

ইউএনও মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাল ও নদী দখল করে মাছ চাষ বা অন্যকিছু করার সুযোগ নেই। যদি কেউ করে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। হোজির নদীতে দেওয়া সকল বাঁধ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের আশ্বাস দেন তিনি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের আওতায় ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদীটি খনন করা হয়েছিল। এই নদী খননের জন্য কত টাকা ব্যয় হয়েছিল এসব বিষয়ে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। নদী ও খাল খননের সময় আমাদের তদারকি থাকে, আমরা দেখভাল করি। খনন শেষে এই খাল ও নদীর দায়-দায়িত্ব জেলা ও প্রশাসনের বলে দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ  সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।