ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্ঘটনার শিকার রোগীকে রক্ত দেওয়া নিয়ে ঢামেকে এদিক-সেদিক!

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২২
দুর্ঘটনার শিকার রোগীকে রক্ত দেওয়া নিয়ে ঢামেকে এদিক-সেদিক! আহত জাকিরের শরীরে রক্ত দেওয়া চলছে। রক্তের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে ভাগিনা ফাহিম

ঢাকা : জাকির হোসেন (৩৫)। সিএনজি অটোরিকশার এ চালক রোববার (৩ জুলাই) চাঁদপুরের কচুয়া এলাকায় যাত্রী পরিবহনের সময় মাইক্রোবাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার শিকার হন।

প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে। সেখানে চিকিৎসা বিড়ম্বনার শিকার হন তিনি!

জানা গেছে, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে জাকিরকের রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। রক্ত দেওয়া হলে স্বজনদের রোগীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের লোকজন। যে অনুযায়ী রোগীকে ফিরিয়েও নিয়ে যান স্বজনরা। কিন্তু তার আগেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের।

জাকিরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুরুতর আহত অবস্থায় জাকিরকে ঢামেকের নাক-কান-গলা বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি নেয়নি। জাকিরের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার তার শরীরে আলাদা করে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। রক্তও দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু জাকিরকে বিভাগে না রেখে বাসায় চলে যেতে বলেন সেখানকার লোকজন। ঢামেকের তিন তলায় এ ঘটনার পর জাকিরকে ট্রলি করে নিচ তলায় নামিয়ে আনা হয়। এ সময় পর্যন্ত তার শরীরে রক্ত দেওয়া চলছিল। নিচতলায় জরুরি বিভাগের ইমারজেন্সি ওটি সংলগ্ন কক্ষের পাশে জাকিরের রক্ত নেওয়া শেষ হয়। পরে সেখান থেকেই তাকে নিয়ে চলে যায় পরিবার।

এর আগে রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে জরুরি বিভাগের সামনে জাকিরের ভাগিনা ফাহিম ইসলাম সৈকতকে দেখা যায় রক্তের ব্যাগ হাতে। ব্যাগটি উঁচু করে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তখনই তার কাছ থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা বিড়ম্বনা সম্পর্কে জানা যায়।

ফাহিম জানান, রোববার দুর্ঘটনার পর তার মামাকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকরা তাকে জরুরি বিভাগ থেকে নিউরোসার্জারি (৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে) বিভাগে পাঠায়। পরে সেখান থেকে জাকিরকে নাক-কান-গলা বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষ করা হলে চিকিৎসকরা জাকিরকে ফের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান।

সেখানে জাকিরের মাথায় সিটিস্ক্যান করানো হয়। প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকরা জানান, জাকির ভালো আছেন, তাকে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় জাকিরের শরীরে রক্ত প্রদান চলছিল বলেও জানান ফাহিম। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। ফাহিম বলেন, চিকিৎসা শেষে আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু আহত একজন রোগীর শরীরে রক্ত চালু অবস্থায় তার মুভমেন্ট করা ঠিক না, এ কথা হাসপাতালের কেউ আমাদের বলেনি। কি করতে হবে আমরা কীভাবে বুঝবো? তাছাড়া হাসপাতালের কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা দুর্ব্যবহার করে। এ অবস্থায় রোগীকে ভর্তিও রাখেনি।

পরে ঢামেক থেকে জাকিরকে নিয়ে গিয়ে চাঁদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার শিকার জাকির হোসেনের মুখে ক্ষত ছিল। চিকিৎসকরা ক্ষতস্থানে সেলাই করে দেন। এতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এ সময় রোগীর স্বজনদের রক্ত সংগ্রহের কথা বলা হয়। তারা নিয়ে আসলে জাকিরের শরীরে রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. আলাউদ্দিন বলেন, কোনো রোগীকে রক্ত দেওয়া হলে অবশ্যই তাকে কোনো না কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। যেটা যেকোনো হাসপাতালে হলেও হবে। কিন্তু বাসায় নয়। কারণ, রক্ত দেওয়ার সময় রি-অ্যাকশন হতে পারে।

ঢামেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও হাসপাতালের নাক-কান-গলার বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদারও একই কথা বলেন। তিনি আরও জানান, ওই রোগীকে তাদের বিভাগে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার মাথার কাছে আঘাত ছিল। সে কারণে তাকে জরুরি বিভাগের নিউরোসার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে কী হয়েছে, সেটি তার জানা নেই।

এদিকে, জাকিরের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, রক্ত দেওয়া অবস্থায় রোগী দিয়ে টানা-হেঁচড়া করা ঠিক না। রক্ত দেওয়া অবস্থায় রোগী কোথায় যাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হাসপাতালের সমন্বয়ের অভাবের কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সূত্রটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ৪ জুলাই, ২০২২
এজেডএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।