ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এবার বাড়ি ফিরতে নেই কোনো বাধা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২২
এবার বাড়ি ফিরতে নেই কোনো বাধা

মাদারীপুর: দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য এবারের ঈদযাত্রা একেবারেই ভিন্ন। ঘরে ফিরতে আর কোনো বাধা নেই।

পদ্মা সেতু পার হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরবে হাজার হাজার মানুষ। ঈদ মৌসুমে চিরচেনা বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের সেই দৃশ্য আর নেই এই ঈদে। ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে পাড়ি দিতে হবে না উত্তাল পদ্মা।

ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে নৌযানে নিজের জায়গা করে নেওয়ার প্রতিযোগিতাও নেই এবার। বাড়ি ফেরা নিয়ে বাড়তি টেনশনও করতে হচ্ছে না দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। পদ্মাসেতু যাত্রাপথে আশির্বাদ নিয়ে এসেছে বলে জানান সাধারণ যাত্রীরা।

যাত্রীরা জানান, গত ঈদেও নানা ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে নৌযানে নিজের জায়গা করে নেওয়ার এক রকম প্রতিযোগিতা ছিল। স্পিডবোটে বাড়তি ভাড়া দিয়ে উঠতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এছাড়া রাতে পদ্মা পার হওয়া নিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভোগান্তি। বৃষ্টির মধ্যে গভীর রাতেও অসংখ্য যাত্রী পদ্মা পার হয়ে বাংলাবাজার ঘাটে এসে গন্তব্যের গাড়ির জন্য ভিজতে হয়েছিল। এর আগের বছর শুধুমাত্র ফেরিতে পার হতে গিয়ে তীব্র গরম ও মানুষের চাপে কমপক্ষে পাঁচযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।  

বাড়ি ফিরতে আর চিন্তা নেই। ঝড়-বৃষ্টি বা গভীর রাতেও এখন বাড়ি ফেরা যায়। গত ঈদে যারা কষ্ট করে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি গিয়েছেন, এবার তারা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারছেন। কোন রকম ভোগান্তি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। মহাসড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ। তবে পদ্মা সেতুতে এখন পর্যন্ত গাড়ির বাড়তি চাপ তৈরি হয়নি। টোলপ্লাজায় মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্টি হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যই স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।

মাদারীপুরের শিবচরের যাত্রী মো. শাওন বলেন,পদ্মা সেতু ঢাকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের চিত্র আমূল বদলে দিয়েছে। বাড়িতে যেতে এখন মাত্র এক ঘণ্টা পনের-বিশ মিনিট লাগছে! ভোরে রওনা দিয়ে সকালে বাড়ি ফিরে নাস্তা করা যায় এখন।  

ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন বাড়ি ফিরতে কোনো বাধা নেই। যেকোনো সময় বাড়ি ফেরা যায়। আবার ঢাকাও যাওয়া যায়। ঈদে বাড়ি ফিরতে মানুষের কোনো ভোগান্তি হবে না। সময়ও কম লাগবে।  

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষেরা পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহনের চাপ বেড়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে। ঈদযাত্রায় সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিতে যতটুকু সময় ব্যয় হয় পরিবহনের। এরপর মহাসড়কের কোথাও থামতে হচ্ছে না।  

পরিবহন চালকেরা জানান, ঈদে বাড়ি ফিরতে নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন যাত্রীরা। গত ঈদেও বাড়ি ফিরতে ভোগান্তির শেষ ছিল না। এবার ঢাকা থেকে গাড়ি উঠলে একেবারে গন্তব্যে গিয়ে নামতে পারছেন যাত্রীরা। তাছাড়া সময়ও লাগছে খুবই কম। আগে বাড়ি ফিরতে যেখানে ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় হতো। এখন মাত্র ২-৩ ঘণ্টা লাগছে গন্তব্য অনুযায়ী।  

শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে,ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত মঙ্গলবার থেকে ঈদ পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা থেকে ভাঙ্গা উপজেলার বগাইল পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার শিবচর হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ তৎপরতা থাকবে।

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মহাসড়কে যেন ঘরমুখো মানুষের কোনো দূর্ভোগ না হয়, সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। ঈদ পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত আমাদের বিশেষ কার্যক্রম থাকবে মহাসড়কে। যাতে করে ফিরতি পথেও যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি না হয়। মহাসড়কে যানজট নিরসনে আমাদের হাইওয়ে পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। যেখানেই যানজটসহ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাবে সেখানেই তাৎক্ষণিক ছুটে যাবে আমাদের টিম।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২২
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।