ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পরিবার ও বন্ধুদের দাবি

৬০০ কোটি টাকা প্রকল্পের অর্থ হাতাতে সুব্রতকে পরিকল্পিত হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
৬০০ কোটি টাকা প্রকল্পের অর্থ হাতাতে সুব্রতকে পরিকল্পিত হত্যা প্রকৌশলী সুব্রত সাহা

ঢাকা : রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’র সংস্কার প্রকল্পের কাজের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এ কাজে পুরো অর্থ খরচ হয়নি।

কিছু টাকা বেঁচে যাওয়ায় তা অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ‘খেয়ে ফেলতে’ চেয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা। কিন্তু প্রকল্পের প্রকৌশলী সুব্রত সাহা ছিলেন তাদের বিপরীতে। প্রতিনিয়ত চাপ সহ্য করেও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না তিনি। ফলে পরিকল্পিত হত্যার শিকার হন তিনি।

সোমবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করেন প্রকৌশলী সুব্রত সাহার পরিবার ও বন্ধুরা।

চলতি বছর ২৫ মে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল চত্বর থেকে সংস্কার প্রকল্পের প্রকৌশলী সুব্রতর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর হোটেল কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করে।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুব্রত সাহার বন্ধু প্রকৌশলী রিয়াসাত সুমন বলেন, ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হতে চলছে। এখনও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। হোটেল কর্তৃপক্ষ একেক সময় একেক ধরনের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, হোটেলের ১১ তলার ছাদ থেকে পড়ে প্রকৌশলী সুব্রত আত্মহত্যা করেছেন। কখনও তারা বলছেন, সুব্রত মানসিক রোগী ছিলেন, নিয়মিত মানসিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কখনও বলছে, শেয়ার বাজারের লোকসানের কারণে মানসিক বিপর্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে হোটেল কর্তৃপক্ষের এসব দাবির কোনো সত্যতা আমরা পাইনি।

রিয়াসাত সুমন আরও বলেন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল একটি আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল। এই হোটেলের সংস্কারের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বাজেট এসেছিল। সুব্রত সাহা বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছেন, হোটেলের প্লানিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান  প্রকৌশলী আশরাফুর রহিম ও বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আজিজার রহমান মিলে এ অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছিলেন। এজন্য তারা বাজেটের অতিরিক্ত বিল তৈরি করে সেই বিলে সুব্রত সাহাকে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু এতে সুব্রত রাজি ছিলেন না। এর জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে গত ২২ বছর ধরে সুব্রত সাহা হোটেল কন্টিনেন্টালের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করে আসছিল। ওই দুই কর্মকর্তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত এক বছর ধরে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল। প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করলেও সম্প্রতি তাকে হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় তাকে কাজ করানো হতো। কর্মক্ষেত্রে এসব হয়রানির কথা তিনি তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় বলেছিলেন।

রিয়াসাত সুমন বলেন, মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে ওই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে সুব্রত সাহা কাজ নিয়ে বিরোধ ছিল। ওই কর্মকর্তারা ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে তাকে আত্মহত্যা করে লাশ হোটেলের ভিতরে ফেলে রাখেন। তিনি দাবি করেন, হত্যা মামলা দায়েরের পর ওই দুই কর্মকর্তা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা আবার অফিস করছেন। এদিকে মামলাটি এখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে।

ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি। এক মাস আগে সুব্রত সাহার স্ত্রী নূপুর সাহার সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু তারপরে মামলা আর কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা চাই ও তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।

এর আগে গত ৩ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ঘটনার দুই মাস অতিবাহিত হলেও ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। পরিকল্পিতভাবে এই হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত সুব্রত সাহার স্ত্রী নূপুর সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর মামলা হয়েছে। শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করলেও এখন আর এই ঘটনা নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। এক মাস আগে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র মেয়ে নিয়ে আর্থিক কষ্টে আছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষও তাদের পাওনা টাকা এখনও বুঝিয়ে দেয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে ডিবির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে সুব্রত সাহা আত্মহত্যা করেছেন।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’র প্লানিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুর রহিম ও বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আজিজার রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একজনের নম্বরে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অপরজনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময় : ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad