ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যর্থ হয়ে দর্শকের ভূমিকায় বিআরটিএ

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২২
ব্যর্থ হয়ে দর্শকের ভূমিকায় বিআরটিএ

ঢাকা : দ্বিতীয় দিনও ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানী জুড়ে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি দর্শকের ভূমিকায়।

দশটি পরিদর্শন টিমের অভিযানের কথা থাকলেও তেমন কিছু চোখে পড়েনি। অতিরিক্ত ভাড়া ও ওয়ে-বিলের নামে পকেট কাটায় যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের হয়েছে বাকবিতণ্ডা। হেলাফেলা করা হচ্ছে বলেই এ সমস্ত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ, অভিযোগ অনেকের।

সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর সায়েন্স-ল্যাব, শাহবাগ, আজিমপুর, পল্টন, মহাখালী, গুলিস্তান ঘুরে এসব পরিস্থিতি দেখা গেছে।

যাত্রী-পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা
সোমবার বিভিন্ন সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা চোখে পড়েছে। দুপুরে মালঞ্চ পরিবহনের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে আসলে দেননি বেসরকারি চাকরিজীবী শামসুর রহমান। বিষয়টি চোখে পড়তে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ধানমন্ডি থেকে পল্টনের ভাড়া চাচ্ছে ২০ টাকা অথচ এ রুটে আগে ভাড়া ছিল ১০ টাকা।

শাহবাগ, পল্টনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন বাংলানিউজকে অতিরিক্ত ভাড়ার নেওয়ার বিষয়টি জানেন বলে স্বীকার করেন। তার ভাষ্য, পরিবহনগুলো নতুন চার্ট ব্যবহার করছে না। যেহেতু ভাড়া বেড়েছে, ২-৩ টাকা বেশি নিচ্ছে। আবার কোথাও ৫-১০ টাকা বেশি নিচ্ছে।

দ্বিতীয় দিনেও বাসে নেই ভাড়ার তালিকা
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার বেশ কয়েকটি বাসে ভ্রমণ করেও নতুন ভাড়ার চার্ট দেখতে পাননি বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। এর মধ্যে রয়েছে, গাজীপুর রুটের আজমেরী; টঙ্গী-গাজীপুরা রুটের ভিক্টর পরিবহন; সাভার রুটের সাভার পরিবহন; মিরপুর রুটের বিহঙ্গ ও তানজিল পরিবহন; মিডলাইন; ট্রান্স সিলভা পরিবহন; নগর পরিবহন। অথচ ভাড়া বৃদ্ধির পর প্রথম প্রহরেই চার্ট টাঙানোর কথা ছিল পরিবহন মালিকদের।

পরিবহন শ্রমিকরাও ‘মালিকদের পক্ষ দেয়নি তাই চার্টও সাঁটানো হয়নি’ গান গেয়ে যাচ্ছেন।

বন্ধ হয়নি ওয়ে-বিলের নামে যাত্রীদের পকেটকাটা
মালঞ্চ, মিডলাইন, সাভার পরিবহন, বঙ্গবন্ধু টু এয়ারপোর্ট পরিবহন, রমজান, বিকাশ পরিবহনসহ অধিকাংশ বাসেই ওয়ে-বিলের নামে কোথাও দশ টাকা, কোথাও ১৫ কিংবা আবার ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পরিবহনের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি ভাড়া বাড়ার দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ হয়নি। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

অথচ বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন দাবি করছেন, ওয়ে-বিল নেওয়ার বিষয়টি তার চোখে পড়েনি!

বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক তাকে শাহবাগ, পল্টন, কমলাপুর, ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরে ওয়েবিল নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে জানান। তখন ফিরোজা পারভীন বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, মালঞ্চ পরিবহনসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ চোখে পড়েছে। এ বিষয়টি নোট করলাম।

ওয়ে-বিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া কাটার বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছিলেন, যারা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু গত দুদিন ধরে এমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

ওয়ে-বিল অবৈধ উল্লেখ করে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাদের ম্যাজিস্ট্রেট যদি এ ধরনের অভিযোগ পান, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু রোববার-সোমবার সমানে ওয়ে-বিল নেওয়া হলেও প্রতিশ্রুতির কোনো বালাই দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।

দ্বিতীয় দিনে বিআরটিএ’র ভূমিকা
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিআরটিএ কর্তৃক ঢাকা ও চট্টগামে ১২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। মোট ৪২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১ লাখ তেইশ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এছাড়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও রুট পারমিট না থাকায় মনজিল পরিবহনের একটি বাস ডাম্পিং করা হয়।

কি বলছেন যাত্রীরা
বাংলানিউজ যে এলাকাগুলোয় পরিবহন সম্পর্কিত তথ্য নিতে গিয়েছে, সেখানকার যাত্রীরা একাধিক অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, সারা মাসে যা আয় করেন, তার কিছু অংশ বাস ভাড়ায় চলে যায়। অন্যান্য দেশে পরিবহন ভাড়ার একটি সামঞ্জস্যতা রয়েছে। বাংলাদেশে নেই। যে যার মতো চাইছে ভাড়া কাটছে। এটি চলতে দেওয়া যায় না। সরকার দেশের উন্নয়নের দাবি করছে, কিন্তু সড়কগুলোয় তাকালে সেটি দেখা যায় না। পরিবহনগুলো নিজেদের ইচ্ছা মতো চলে। রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠা নামা করে। একটা আরেকটার পেছনে লেগে থাকে। কেউ কাউকে আগে যেতে দিতে চায় না। এভাবে যানজট সৃষ্টি করে রাখে।

রাজধানীর বেশিরভাগ যানজট বাস চালক-হেলপার সৃষ্ট। তার ওপর লেগুনা নামে কিছু পরিবহন আছে, এসবের চালক মানুষকে মানুষ মনে করে না। যেখানে মন চায় দাঁড়িয়ে যায়, গায়ে লাগিয়ে দেয়। দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এসব পরিবহনের নেই কোনো ফিটনেস। যে সড়কে রিকশা চলার নয়, দেদারসে চলতে থাকে। উল্টোপথে রিকশা আসে। ট্রাফিক সদস্যরা দেখেও দেখে না। পরিবহন সংশ্লিষ্ট আমলারা এসব চোখে দেখে না। তারা তাদের মতো আসে যায়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়িয়ে চলেন তারা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-উপমন্ত্রীরাও এ ব্যাপারে উদাসীন। তাই অন্যান্য সমস্যার মতো এ সমস্যা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন যাত্রীরা।

পরিবহন যাত্রী, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছে, অবিলম্বে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বিড়ম্বনা বাড়বে। বিআরটিএ’র ভূমিকাকে হতাশাজনক। সংস্থাটির লোক-দেখানো কার্যক্রমও কোনো কাজে আসবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময় : ২১৩৩ ঘণ্টা, ৮ আগস্ট, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।