ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নাটোরে চিকিৎসক-শিক্ষককের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২২
নাটোরে চিকিৎসক-শিক্ষককের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল

নাটোর: নাটোরে এক চিকিৎসক ও শিক্ষিকা অবাধ অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন রোম্বিয়া আক্তার শিখা নামে এক সেবিকা।

রোম্বিয়া আক্তার শিখা অভিযোগ করে জানান, চিকিৎসক ও শিক্ষিকার অশ্লীলতায় সহযোগীতা না করায় তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়।

এদিকে শিক্ষিকার অশ্লীলতার বিচার চেয়ে অধ্যক্ষ ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রশাসকসহ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শহরের পশ্চিম আলাইপুর হাফরাস্তা এলাকার বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন এবং নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর ৪০ মিনিট ও ২৮ মিনিটের দুইটি অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে  স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে। আর তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না আসায় শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাটোরের জেলা প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রোম্বিয়া আক্তার শিখা নামের এক সেবিকা লিখিত অভিযোগ করে বলেন, আমিনুল ইসলাম ও নাজমুন নাহার নাটোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত অশ্লীলতায় মাতেন। গত ছয় বছর ধরে সহকারি সেবিকা হিসেবে কর্মরত আছি। তাদের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগীতা না করায় প্রথমে আমাকে প্রকাশ্যে মারপিট করা হয় এবং জেল খাটানোর হুমকি দেওয়া হয়। এর পরে এ বছরের ৫ মার্চ আমাকে  পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, যাদের অশ্লীলতায় ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তারা কিভাবে দায়িত্বে বহাল থাকেন? আমি তাদের বিচার দাবি করছি।

এদিকে নাটোর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও নাজমুন নাহারের উপযুক্ত বিচার দাবি করে আবেদন করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাটোর সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কোনো শিক্ষক এমনটা করতে পারে তা আমরা কল্পনাই করতে পারি না। কোথাও আমরা মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে এমন একজন সহকর্মী আছেন, এটি ভাবতেই আমরা লজ্জা পাচ্ছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।

অভিযুক্ত নাজমুন নাহার সাথী বাংলানিউজকে বলেন, ডা. লিপন এবং আমার মধ্যে চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক। আমি চিকিৎসার জন্য নিয়মিত তার চেম্বারে যাতায়াত করতাম। এক পর্যায়ে দুইজনের সম্মতিতে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা কিভাবে ভিডিও হয়েছে তা ইমি জানি না। আমি ওই অভিযোগকারী নারী সেবিকাকেও চিনি না। কোনো একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করছে।

অপরদিকে ডা. আমিনুল ইসলাম লিপনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। চেম্বারে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

ডা. লিপনের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত আলসান হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী শফিউল আলম বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের মুখমন্ডল পরিবর্তন করে ভিডিও তৈরি করা যায়। ডা. লিপনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার সুনাম নষ্ট করতে এমন অনৈতিক ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ক্লিনিক মালিক জানান, ওই শিক্ষিকা ফেসবুক এবং ফোনে ডা. লিপনের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই ঘনিষ্ট মূহর্তের ভিডিও ধারণ করিয়ে তা স্থানীয় কিছু তরুণের মাধ্যমে চিকিৎসককে ব্লাকমেইল করতে থাকেন। মোটা অংকের টাকা না দিলে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। পরে মান ইজ্জতের কথা ভেবে ড. লিপন টাকা দিয়ে বিষয়টি নিশ্পত্তি করেন। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে।

নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, নাজমুন নাহারের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে মিটিং ডেকে স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।