ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১১ বছর আত্মগোপনে থাকা খুনির পরিচয় প্রকাশ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
১১ বছর আত্মগোপনে থাকা খুনির পরিচয়  প্রকাশ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে 

ঢাকা: রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে রজব আলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জিকুকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)। ঘাতক জিকু ১১ বছর ধরে নাম-পরিচয় বদলে আত্মগোপনে ছিলেন।

 

সর্বশেষ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ঢাকার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকা থেকে জিকুকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, একটি মাদক নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি হলে লম্বা চুল ও দাড়ি কাটার পর তার পরিচয় প্রকাশ পায়।  

ঘটনা প্রসঙ্গে র‍্যাব জানায়, নিহত রজব আলী ও জিকু দুই বন্ধু ছিলেন। তারা দুই জনই মাদকাসক্ত। একসঙ্গে মাদক সেবন করতেন। মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই রজব আলীর সঙ্গে জিকুর শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ২০১১ সালে জিকু তার কয়েকজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে রজবকে হত্যা করেন। এ হত্যার ঘটনায় জিকু গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপন চলে যান। দীর্ঘ ১১ বছর পর অভিযানের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জিকু জানান, তিনি এবং ভুক্তভোগী রজব আলী ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তারপরও এলাকাভিত্তিক উঠতি বয়সী যুবকদের গ্রুপে তারা যুক্ত ছিলেন। জিকু ও রজব পাড়ায় একসঙ্গে দল বেঁধে মাদক সেবন করতেন। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভুক্তভোগী রজব আলী তাদের মাদক সেবনের সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করেন এবং সবাই মিলে দল বেধে মাদক সেবন করেছিলেন। পরে মাদকের টাকা পরিশোধ না করে জামানতের মোবাইল ফেরত চাওয়ায় জিকু ও রজবের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এই শত্রুতাকে কেন্দ্র করে জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভুক্তভোগী রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

২০১১ সালে ২৪ জুলাই রাতে নবাবপুরে একটি মোবাইলের দোকানে ভুক্তভোগী রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন তার ওপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

তিনি বলেন, ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১২ সালে ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। বিচার কাজ শেষে আদালত ২০১৯ সালে ১ আগস্ট জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক।

রায় ঘোষণার সময় সব আসামি পলাতক ছিলেন। এছাড়াও একই রায়ে ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

জিকুর পলাতক জীবন নিয়ে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, রজবকে হত্যার পর পর মাতুয়াইল এলাকায় মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যান জিকু। সেখানে আট মাস পলাতক থাকার পর সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যান। ৬ মাস জেল খেটে জামিনে বের হন জিকু। জামিনে বের হওয়ার পর তিনি বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যান। কোর্টে গিয়ে আর হাজিরা দেননি। জিকু সেই থেকে পলাতক জীবন-যাপন শুরু করেন।

বিভিন্ন জায়গাতে জিকু নিজেকে মোটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি মোটর মেকানিকের কাজ জানতেন বলে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করেছেন। এক সময় নাম পরিবর্তন করে নিজেকে নাসির উদ্দিন বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর তিনি আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। তিনি লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশভূষা বদলে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে তার মাদকাসক্তির পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে তিনি মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হন। নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে জিকুর চুল-দাড়ি কেটে দেন। এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায়। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার আসামির বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
এসজেএ/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।