ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৭ বছরেও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি গিরিশচন্দ্র সেন যাদুঘর

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
৭ বছরেও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি গিরিশচন্দ্র সেন যাদুঘর

নরসিংদী: উদ্যোগ নেওয়ার দীর্ঘ ৭ বছরেও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেন যাদুঘর। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তার পৈত্রিক বাড়ি নরসিংদীর পাঁচদোনায় নির্মাণ কাজটি চলমান থাকলেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে শেষ সময় নির্ধারণ হয়নি।

সোমবার (১৫ আগস্ট) ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের ১১২তম প্রয়াণ দিবস। দিবসটি পালনে স্থানীয় প্রশাসন এমনকি কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

১৮৩৪ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার পাচঁদোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন। হিন্দু পরিবারে জন্ম হলেও তার সুনাম-সুখ্যাতির কেন্দ্র বিন্দু ছিল আরবি-ফার্সি ভাষার পাণ্ডিত্য জ্ঞান। ১৮৭১ সালে গিরিশ চন্দ্র সেন সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে ৪২ বছর বয়সে তিনি মৌলভী এহসান আলীর কাছে আরবি ব্যাকরণ শেখেন। তিন বছর কঠোর সাধনার পর ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলায় গিরিশ চন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম পারা বাংলা অনুবাদ করেন যা শেরপুর চারু চন্দ্র প্রেস থেকে ছাপা হয়। পরবর্তী ৬ বছর কঠোর পরিশ্রম করে সম্পূর্ণ কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। তিনি তার প্রকাশিত ৩৫টি গ্রন্থের মধ্যে ২২টি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক।

ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে নরসিংদীর পাঁচদোনা গ্রামের বাড়িতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। অথচ এ মহান ব্যক্তির স্মৃতি বিজড়িত পাঁচদোনার এই বাড়িটি সংরক্ষণ তো দূরের কথা, উল্টো বেদখলে চলে যায় তার ভিটে-বাড়ি। নিশ্চিহ্ন হতে থাকে তার শেষকৃত্য স্থানটিও।

অযত্ন-অবহেলায় পরে থাকা এই মহামানবের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে যাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। ২০০৮ সালে বাড়িটির মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কারে অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে ভারতীয় হাই-কমিশন। পরে ২০১৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে এক কোটি ২০ লাখ টাকায় বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়।

সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও দিক নির্দেশনায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হলেও নির্মাণ কাজ বাকি থাকায় পুরোদমে চালু হচ্ছেনা যাদুঘরটি। লোকবল না থাকায় যাদুঘরটি সপ্তাহে শনিবার ব্যতীত খোলা রাখাও সম্ভব হচ্ছেনা। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি জুড়ে এখন ময়লার ভাগাড়।

স্থানীয় বাসিন্দা সুদীর রায় বলেন, জ্ঞানের যে কোনো সীমা নেই তা গিরিশ চন্দ্র সেন থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। তিনি হিন্দু হয়েও আরবি-ফার্সি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন।

আরেক বাসিন্দা অচিন্ত্য পাল বলেন, যাদুঘর বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে। অযত্ন আর অবহেলায় যাদুঘরের আশপাশে ময়লার ভাগাড় জমেছে।

অন্য বাসিন্দা কমল হাসান বলেন, সেন বংশের প্রচুর সম্পত্তি ছিল। কালের পরিক্রমায় তা আজ সবই বেদখলে চলে গেছে। আমরা চাই জাদুঘরের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ করে এটাকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার।

মাধবদীর ভাই গিরিশচন্দ্র সেন গণ-পাঠাগারের সভাপতি শাহীনুর মিয়া বলেন, পবিত্র কোরআন শরিফের অনুবাদ করে ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন শুধু নরসিংদী বা বাংলাদেশে নয়, সমগ্র উপমহাদেশেই একটি অতি পরিচিত নাম। তবে বর্তমান প্রজন্মরা জানেনা গিরিশ চন্দ্র সম্পর্কে। তেমনি স্থানীয় লোকজনও ভুলতে বসেছেন গিরিশ সেনের ইতিহাস। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই মহামানবের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যাদুঘরের সংস্কার কাজ শেষ করে যেন সাধারণ মানুষের জন্য খোলে দেওয়া হয়।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান  বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িটি সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঐতিহ্য অন্বেষণ কাজ শেষ করলেও জাদুঘরের কাজ আরও বাকি রয়েছে। অচিরেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ প্রাপ্তির ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া বাড়িটি ঘিরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।