ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

হাতিরঝিল থানায় মৃত্যু: পরিবারকে মরদেহ দিতে পুলিশের শর্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
হাতিরঝিল থানায় মৃত্যু: পরিবারকে মরদেহ দিতে পুলিশের শর্ত রুমন

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে মৃত্যু হওয়া তরুণ রুমন শেখের মরদেহ নিয়ে পুলিশের টালবাহানার অভিযোগ করেছে পরিবার। রুমনের বড় ভাই সুমন শেখ বলেছেন, পুলিশ তার ভাইয়ের মরদেহ হস্তান্তরে শর্ত দিয়েছে।

এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন নিহত রুমনের পরিবার।

রোববার (২১ আগস্ট) রুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার ও ভাই সুমনের সঙ্গে কথা হলে বাংলানিউজকে তারা জানান, থানা থেকে ঘটনাটিকে অপমৃত্যু বলা হচ্ছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তারা মামলা করতে চেয়েছিলেন।

সুমন বলেন, ‘আদালতে আমরা তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলি। আমাদের ধারণা আইনজীবীরাও ভয় পাচ্ছেন। মামলার বিষয়টি নিয়ে তারা গড়িমসি করছেন। আইনজীবীরা বলেছেন, মামলা হতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে। আপাতত তারা লেখালেখির কাজটুকু করবেন। আমি আইনজীবীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কেন এ বিষয়ে গড়িমসি করছেন? থানা থেকে ফোন কল দিলে কি আপনারা পিছিয়ে যাবেন? উত্তরে আইনজীবীরা জানান, পিছিয়ে যেতে পারি। কারণ তাদেরও ভয় আছে। কীসের ভয়, তারা জানাননি।

এদিকে পুলিশ আমাদের কাছে মরদেহ দিতে চাচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে। তারা বলেছে, সরাসরি হাসপাতাল মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাদের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে মরদেহ নিতে হবে। তা না হলে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ, রামপুরা বাসায় আমরা মরদেহ নিতে পারব না। আদালতে গিয়ে আমরা সহযোগিতা পাইনি; পুলিশও কোনো সাহায্য করছে না। আপাতত আমরা এলাকায় ফিরে যাচ্ছি। এমন অসহযোগিতার জন্য আমরা আন্দোলনেও নামতে পারি। আজ রুমনের মরদেহ নেব না।

সুমন বাংলানিউজকে আরও বলেন, যদি সুষ্ঠুভাবে ময়নাতদন্ত করে তবেই আমরা মরদেহ নিতে যাব। এ হত্যার বিচার আমরা চাই। কারণ, রুমনের সন্তান এতিম হয়ে গেছে।

রুমন শেখ তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার ও ছেলে রাকিবকে নিয়ে হাতিরঝিলে মহানগর প্রজেক্টে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।  

রোববার দুপুরে নিহত রুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ ও আইনজীবীরা তাদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। ছোট থেকে তারা রামপুরায় বড় হয়েছেন। স্বামীর মরদেহ সেখানে দেবে না- এটা কেমন সিদ্ধান্ত পুলিশের?

তিনি বলেন, যে কারণেই আমার স্বামীকে গ্রেফতার করুক, পুলিশ তো নিরাপত্তা দেবে। অথচ, তাদের উপস্থিতিতে থানার ভেতরে রুমনের মৃত্যু হলো। নির্যাতনের ভয়ে হোক আর যেকোনো কারণে; থানা হাজতের ভেতরে রুমনের মৃত্যু হয়েছে। এর দায় পুলিশকেই নিতে হবে।

রুমনের পরিবার বলছে, মরদেহ নিতে হলে তারা আইন মেনে নেবেন। এ প্রক্রিয়ায় কি কি রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করবেন। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

নিহত সুমন শেখের বেয়াই মো. সোহেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে পুলিশ রুমনের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। তাই শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুপিচুপি মরদেহ নিতে বলেছিল হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

এদিকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আজিমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, হাতিরঝিল থানায় রুমন নামে এক আসামির আত্মহত্যার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে থানায় ওই সময় দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও পুলিশ সদস্য মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ডিসি আজিমুল হক বলেন, নিহত রুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া বাকি নেই।

রামপুরায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে গত ৫ বছর ধরে কাজ করছিলেন রুমন। সম্প্রতি ওই কোম্পানির ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ও অফিসের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরির ঘটনায় রুমন শেখের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তাকেও শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা হাজতে রাখা হয়। গত শুক্রবার বিকেলে রুমনকে গ্রেফতারের পর তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে চুরির তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার দিনগত রাত ৩টা ৩২ মিনিটে রুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে হাজতের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এসজেএ/এমজে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।