ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সেই রহিমাকে উদ্ধারের পর যা বলল খুলনার পুলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
সেই রহিমাকে উদ্ধারের পর যা বলল খুলনার পুলিশ উদ্ধারের পর রহিমা বেগমকে খুলনায় নিয়ে যায় পুলিশ।

খুলনা: অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে খুলনার গৃহবধূ রহিমা বেগম (৫২) ‘নিখোঁজের’ রহস্য। পুলিশের দাবি, প্রায় এক মাস স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছেন তিনি।

 

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টায় রহিমা বেগমকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিষেশ টিম। পরে তাকে নিয়ে পুলিশের একটি টিম শনিবার দিনগত রাত ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়।  
 
এ সময় গণমাধ্যমের কাছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপির) উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল ভিকটিম রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার জনৈক কুদ্দুসের বাড়িতে আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে এডিসি, দৌলতপুর থানার ওসিসহ একটি টিম সেখানে যায়। আমরা তদারকি করতে থাকি। রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুর থেকে আমাদের টিম জানায় ভিকটিমকে পেয়েছি। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই বাড়িতে যান যেয়ে দেখেন ভিকটিম দুই নারীর সঙ্গে কথা বলছেন। কর্মকর্তারা প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলা বন্ধ করে দেন।  

মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, গত ২৭ আগস্ট রহিমা বেগম নিখোঁজ হন। পরে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়। আমরা তার সন্ধানে কাজ করি। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন না। তাই আমরা সন্ধান পাচ্ছিলাম না। তবে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখি। কেএমপির কমিশনার স্যার নির্দেশ দেন যেকোনো মূল্যে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে হবে, তোমরা গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখো। আমরা তারপর থেকে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়াই এবং ফরিদপুর বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রাম থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।  

তিনি বলেন, যে বাড়িতে ভিকটিম অবস্থান নিয়েছিল সেই বাড়ির কুদ্দুসের স্ত্রী, ছেলে ও কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভিকটিম রহিমা বেগম কাপড়সহ তাদের বাড়িতে যায়। তারা বলেন প্রথমে চিনতে কষ্ট হয়েছিল। পরে চিনে জড়িয়ে ধরেন এবং তাকে সেবা যত্ন করেন। এক সময় কুদ্দুস খুলনার সোনালী জুট মিলে কাজ করার সময় রহিমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। তাদের কাছে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন রহিমা। কুদ্দুসদের কাছে ভিকটিম বলেছেন-  কখনো চট্টগ্রাম, কখনো মোকছেদপুরে ছিলেন তিনি। তবে আমরা এখনও সত্যতা যাচাই করতে পারিনি।  

কেএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি যেহেতু পিবিআইতে হস্তান্তর হয়েছে, এখানে পিবিআই কর্মকর্তারা আছেন তারা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখবেন। ভিকটিমক নিয়ে সারা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাকে উদ্ধার করতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আমরা সবাই খুশি। বাকীটা পিবিআই তদন্ত করবে।  

তিনি বলেন, রহিমা বেগমকে আমরা আমাদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখবো। তারপর পিবিআই চাইলে তাদের কাছে হস্তান্তর করবো। আমি আশাবাদী পিবিআই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।  

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভিকটিম ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন করেছে কিনা জানি না, তিনিই বলতে পারবেন। তবে এইটুকু বলতে পারি যে সব বিষয়ের রহস্য উন্মোচিত হবে। যে রহস্যই থাকুক না কেন ঘটনার রহস্য অবশ্যই উন্মোচিত হবে। একটু ধৈয্য ধরেন আমরা মাত্র নিয়ে আসলাম। পরবর্তীতে সবই জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম (৫২)। ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেন নি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান নি তারা। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।  

এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব-১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।  

এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান।  

২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় পার করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। তিনি ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্যও সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর (আজ) ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
এমআরএম/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।