ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যয়-ভাড়া নিয়ে বিপাকে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
ব্যয়-ভাড়া নিয়ে বিপাকে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দেশে গত কয়েকমাসে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি জেট ফুয়েলের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এতে দফায়-দফায় ভাড়া বাড়িয়ে বিপাকে আছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।

অন্যদিকে, একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একই সময়ে তুলনামূলক বেশ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে।  

বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর দাবি, অপারেটিং কস্ট, সারচার্জ, স্পেসচার্জ, ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীদের চাপ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউএস-বাংলা এবং নভোএয়ার যাত্রী পরিবহন করে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে করে ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যেতে একজন যাত্রীকে গুণতে হচ্ছে চার হাজার ৮শ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে জনপ্রতি তিন হাজার ৭শ টাকা, ঢাকা-সিলেট রুটে তিন হাজার ৫শ টাকা, ঢাকা-রাজশাহী রুটে তিন হাজার ৫শ টাকা, ঢাকা-সৈয়দপুরে রুটে তিন হাজার ৪৯০ টাকা,ঢাকা-যশোরে রুটে তিন হাজার ১৯৫ টাকা ও ঢাকা-বরিশাল রুটে তিন হাজার টাকা নিচ্ছে সরকারি এই এয়ারলাইন্সটি। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করলে মিলছে ১০ শতাংশ ভাড়া ছাড়।

অন্যদিকে, বেসরকারি ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার এয়ারলাইন্স ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া নিচ্ছে পাঁচ হাজার ৪৯৯ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে জনপ্রতি তিন হাজার ৬৯৯ টাকা, ঢাকা-সিলেটে রুটে তিন হাজার ৪৯৯ টাকা, ঢাকা-সৈয়দপুরে তিন হাজার ৪৯৯ টাকা, ঢাকা-যশোরে তিন হাজার ১৯৯ টাকা, ঢাকা-রাজশাহী রুটে চার হাজার ৪৯৯ টাকা ও ঢাকা-বরিশালে রুটে তিন হাজার ২শ টাকা ভাড়া নিচ্ছে বেসরকারি এই এয়ারলাইন্সগুলো।

পাশাপাশি অ্যাপস বা ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট কোড ব্যবহার করে বেজ ফেয়ারে রয়েছে ১০ শতাংশ ছাড়।

যাত্রী সংকটের কারণে গত ১ আগস্ট থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রেখেছে নভোএয়ার। পাশাপাশি একই রুটে যাত্রী সংকটে ভুগছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ কিছু সুবিধা তো পাচ্ছেই। তবে, সেটা আমাদের একমাত্র সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে একই পরিচালনা ব্যয়ে কম ভাড়া রাখা। অন্যদিকে, এখন মূলত বিমানের অফ সিজন এটাও একটা কারন।  একইসাথে, অভ্যন্তরীণ রুটের ক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিমানের জ্বালানি প্রতি লিটারের মূল্য ১২৫ টাকা। যা বছরখানেক আগেও ৫০ টাকার আশপাশে ছিল।

পাশাপাশি যশোর, বরিশাল রুটে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় যাত্রীদের হাতে উল্লেখযোগ্য বিকল্প অপশন এসেছে। ফলে, আমাদের বাধ্য হয়ে ভাড়াও কমাতে হয়েছে৷ কিন্তু, সে অনুপাতে ব্যবসা হচ্ছে না।  

উত্তরণের উপায় কী?

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করণীয় কি এমন প্রশ্নের উত্তরে কামরুল ইসলাম বলেন, এ অবস্থায় জ্বালানির মূল্য প্রথমত সমন্বয় করতে হবে৷ বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বর্তমানে ১ দশমিক ০৯ মার্কিন ডলার৷ সে হিসেবে দেশীয় মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে৷ এখানে পার্থক্য হলে স্বাভাবিকভাবে চাপ পড়ে।

পাশাপাশি ন্যাভিগেশন এবং রুটের পরিচালনা ব্যয় এবং বন্দরের পার্কিং ব্যয় কমানো দরকার। এসব খরচ না কমলে নতুন করে যে এয়ারলাইন্সগুলো আসছে তাদেরও আয়-ব্যয় মিলবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।  

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেখবেন প্রত্যেক বছর কর্তৃপক্ষ বিশাল অংকের অর্থ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে পায়, এটি কীভাবে হলো। বিষয়টি হচ্ছে, আমরা যদি কোনো কারনে বিমানের সারচার্জ যদি পরিশোধ না করি তাহলে বছর শেষে প্রাপ্য চার্জের সাথে অতিরিক্ত ৭২ শতাংশ বাৎসরিক চার্জ যোগ হয়। এই চার্জ যদি বছরে ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়, তাহলে আমদের সেটি পরিশোধ করতে সুবিধা হয়।  

ভাড়া সমন্বয়ে দফতরে চিঠি ও বৈঠক:

এর আগে, গত ১ জুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে চিঠি দেয় দেশীয় উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)। একই সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে চিঠি দেয় সংগঠনটি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ যাত্রীই বহন করছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স, আর বিমান বহন করছে ২০ শতাংশ। কিন্তু বিমান বিভিন্ন রুটের টিকিটের দাম কমিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকায় ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এতে বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো দাঁড়াতে পারছে না। এরই মধ্যে দেশে আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

চিঠির প্রেক্ষিতে পরে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদ হাসান। বৈঠকে ভাড়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জুন মাসে মন্ত্রণালয়ে একটা বৈঠক হয়েছে৷ তবে, সেখানে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ বা এ সম্পর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। বিমান হলো দেশের একমাত্র এয়ারলাইন্স যেটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ( আইএটিএ) স্বীকৃত। ভাড়া নির্ধারণে আমরা এ সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলি। আমাদের ভাড়া ২২টি গন্তব্য হিসেব করে ভাড়া নির্ধারণ করি৷ আমরা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক হিসেব করে ভাড়া নির্ধারণ করি। ফলে, অন্যদের সঙ্গে আমাদের ভাড়ার একটা পার্থক্য হতেই পারে৷ আর এটা বাইরে থেকে কেউ নির্ধারণ করতে পারে না৷ 

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ ২০ ভাগ ফ্লাইট পরিচালনা করে। ৮০ ভাগ ফ্লাইট পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থাগুলো। সুতরাং, আমাদের ভাড়ার কারণে তাদের ওপর প্রভাব পড়ার কথা না। আর, যার-যার ব্যবসা, সে করবে৷ এটা যেহেতু ব্যবসায় সেহেতু প্রতিযোগিতা তো থাকবেই।  মার্কেটে নানা ধরনের প্রোডাক্ট আছে, আমার প্রোডাক্ট যদি কেউ পছন্দ করে, যাবে৷ উনাদের প্রোডাক্ট কেউ পছন্দ করলে যাবে৷

ব্যবসায় আপনাকে রেসপন্সটা আপনাকে ঠিক করতে হবে বিজনেস এনালাইসিসের মাধ্যমে। উনারা যেভাবে করছে, সেটা তো এনালাইসিস না৷ উনারা তো  আইএটিএ স্বীকৃত এয়ারলাইন্স না৷ পাশাপাশি বিমান হচ্ছে ইউরোপিয়ান এসোসিয়েশন অব সেফটিরও মেম্বার৷ কাজেই আমরা সেই নীতিমালার বাইরে যেতে পারিনা।

ভাড়া নির্ধারণ আসলে সরকারিভাবে হয় না, এটা আমাদের নিজস্ব পলিসি অনুযায়ী হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
এমকে/ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।