ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে র‌্যাব: বিদায়ী ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে র‌্যাব: বিদায়ী ডিজি

ঢাকা: প্রতিটি সদস্যের কর্মদক্ষতা ও অসীম সাহসিকতায় জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। সামনের দিনগুলোতেও র‌্যাব সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

র‍্যাব ডিজি হিসেবে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় করেন তিনি।

বিদায়ী র‌্যাব ডিজি বলেন, পূর্বসূরীদের সময়কার সুখ্যাতি বজায় রেখে ও অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে র‌্যাব ফোর্সেসের সদস্যদের মাঝে সততা, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেছি। প্রতিটি সদস্যের কর্মদক্ষতা ও অসীম সাহসিকতায় জন্য র‌্যাব ফোর্সেস দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এই এলিট ফোর্স বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও একটি মডেল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আশা করছি, সামনের দিনগুলোতেও নতুন করে র‌্যাব ফোর্সেস সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।

বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি হিসেবে মনোনীত করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করব। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন।

২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল র‌্যাবের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে বাহিনীটির বিভিন্ন সফলতা তুলে ধরে বিদায়ী ডিজি বলেন, করোনা আক্রান্ত ধূসর সময়ে র‌্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করি আমি। প্রাণঘাতী এই মহামারীর সময়ে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সংক্রমণরোধ থেকে শুরু করে সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিত এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল র‌্যাব ফোর্সেসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

মহামারির সময়ে করোনা আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যদের ডাটাবেইজ ব্যবস্থাপনা, সুচিকিৎসা ও তদারকির জন্য একটি এপ্লিকেশন চালু করা হয়। পর্যাপ্ত সুবিধা সম্মিলিত হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, পর্যাপ্ত আইসিইউ স্থাপন, ভেন্টিলেটর, সার্বক্ষণিক নার্স ও চিকিৎসকদের সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এজন্যই অর্ধেকের বেশি র‌্যাব সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেও ক্যাজুয়াল্টির সংখ্যা ছিল খুবই অল্প।

এছাড়া, মহামারির সময়ে র‌্যাব দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিয়ে এসে রাজধানীতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে র‌্যাব। সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকের বিস্তার নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করে র‌্যাব।

করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, করোনা পরীক্ষায় ভূয়া সনদ প্রদান, অর্থের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদকে গ্রেফতার ছিল করোনাকালীন সময়ে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। এছাড়া করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেষ্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।

প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নিরসনে বর্তমানে বিশ্বের বুকে রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, র‌্যাবের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। দায়িত্বকালীন সময়ে প্রায় ৮ শতাধিক বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব।

মাদক কারবারিদেরকে গ্রেফতারের পাশাপাশি উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাদকের রুট ও চ্যানেল বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেন, আমার দায়িত্বকালীন প্রায় ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক।

তার দায়িত্বকালীন প্রায় ২ হাজার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও ৩ হাজারের অধিক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। গত ২ বছরে র‌্যাব প্রায় ৮ শতাধিক মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করে। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৬ শতাধিক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল, রমনা বটমূলে বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ড ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মুফতি শফিকুর রহমান, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজিবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমীর মুফতি আব্দুল হাইসহ বিভিন্ন নৃশংস মামলার আসামীদের গ্রেফতারের আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০
পিএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।