ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

২৫১ প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসবের বৃহৎ আয়োজনে রাজ মন্দির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
২৫১ প্রতিমা নিয়ে দুর্গোৎসবের বৃহৎ আয়োজনে রাজ মন্দির

বরিশাল: ভিন্নধর্মী নানা আয়োজন আর ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে গোটা বরিশাল বিভাগে সব থেকে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার কবুতরখালীর রাজ মন্দিরে। এরইমধ্যে প্রতিমা তৈরিসহ পূজার আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে এসে আলোকসজ্জা সম্পন্নসহ খুঁটিনাটি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আয়োজকরা জানান, বিগত অর্থযুগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবারে ৫০০টি প্রতিমা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা বিষয় চিন্তা করে ২৫১টি প্রতিমা দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। তবে ধারাবাহিকভাবে আগামীতে প্রতিমার সংখ্যা ৫০০ ও এক হাজার একটি করার ইচ্ছা রয়েছে।

এবারের আয়োজনে বিগত বছরের সঙ্গে নতুন অনেক কিছুই যুক্ত হচ্ছে। যেমন বিগত বছরগুলোর মতো এবারও দুর্গাপূজা যে কয়দিন চলবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনি হাজার লোকের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের জন্য খাবারের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে। অসহায়, দুস্থ নারীদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ এবং দরিদ্র-মেধাবী ও কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা-মাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

তবে এবারের পূজায় নতুন প্রজন্মের জন্য ডাক্তার বাড়ি ও রাজ মন্দির প্রাঙ্গণে অনেক কিছু সংযোজন করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের পাশাপাশি তাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই, তথ্য ও চিত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংযোজন ঘটিয়ে শেখ হাসিনা কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্যচিত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও শেখ রাসেল কর্নার করা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ, প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রাসেল সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু জানতে পারবেন। এছাড়া পুরো ডাক্তার বাড়ি ও মন্দির এলাকাকে ঘিরে বিভিন্ন লেখক-মনিষী, বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাণী সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ছবি, ব্যানার সাটানো হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধসহ আগে পূজা নিয়ে তৈরি প্রদর্শনও করা হবে প্রতিদিন।

রাজ মন্দিরের সভাপতি ডা. সুদীপ কুমার হালদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর রাজ মন্দিরের দুর্গাপূজার আয়োজনে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটে। আর আগতদের সেবায় ডাক্তার বাড়ির সব লোকজন নিজেদের নিয়োজিত করেন। গত একমাস ধরে আমাদের ৪০ জন আত্মীয়-স্বজন পূজার আয়োজনকে কেন্দ্র করে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার শকর পালের নেতৃত্ব ছয়জন পাল ২৫১টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছে।

তিনি বলেন, এবারও সার্বিক নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিজস্ব ভলান্টিয়ার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। পূজা শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন আগতদের উদ্দেশে প্রসাদের ব্যবস্থা করা হবে। রাজ মন্দিরের পাশেই নারী ও শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাউন্সিলিং পয়েন্ট ও ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, পূজা চলাকালে টানা চারদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচটি তোরণের পাশাপাশি মন্দির এলাকায় পদ্মা সেতুর আদলে একটি স্প্যান বানানো হয়েছে। যার মধ্যে লাইব্রেরিসহ তিনটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা বসার স্থান।

রাজ মন্দিরের পূজার আয়োজক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু শৈলেশ্বর হালদার বলেন, এখানে দুর্গাপূজার আয়োজনের পাশেই রয়েছে মা কালির মন্দির, মা মনসা মন্দির, শিব ঠাকুর মন্দির, বাবা লোকনাথের মন্দির, মা সরস্বতীর মন্দির। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজার আয়োজন শেষ করতে। এরইমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

অপর আয়োজক নমিতা হালদার বলেন, তার চার সন্তানসহ স্বজনদের অংশগ্রহণে কয়েক বছর ধরে বৃহৎ আকারে রাজ মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। বিশেষ করে ডা. সুদীপ কুমার হালদার, তার স্ত্রী ডা. স্নিগ্ধা চক্রবর্তী পুরো আয়োজনের সব কাজের দেখভাল করে থাকেন। যাতে পূজাতে আসা কোনো মানুষ কষ্ট না পান। আমাদের এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আসেন পূজা দেখতে।

স্থানীয় বাসিন্দা হরিদাস জানান, এ পূজাকে ঘিরে আশপাশের মানুষদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ রয়েছে। এ মন্দিরকে ঘিরে গ্রামীণ মেলাও বসবে। আর দিনে দিনে এত ভিড় বাড়ছে যে আশপাশের সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। শুনেছি এবার নাকি বিভিন্ন মন্ত্র লেখা সংবলিত লিফলেটও করা হচ্ছে। যা মন্দির এলাকায় প্রবেশ করেই পাঠ করতে পারবেন যে কেউ। যাতে নতুন প্রজন্ম ধর্মের ওপর আরও শ্রদ্ধাশীল হবে বলে মনে করছি।

উল্লেখ্য, নিজের ইচ্ছে ও বাবার মানত পূরণ করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ডা. সুদীপ কুমার হালদার কবুতরখালীর ডাক্তার বাড়ির রাজ মন্দিরে গত ২০১৬ সালে ৪১টি প্রতিমা দিয়ে প্রথম বৃহৎ আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। এরপরের বছর একশ এবং পরের বছর আড়াইশটি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজনের আকার বড় হতে থাকে। তবে করোনার কারণে দুই বছর বৃহৎ আকারের আয়োজন বন্ধ থাকার পর এবারে আবার ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। পূজামণ্ডপ এলাকায় বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জার মধ্যেই সাজানো হয়েছে কৃত্তা রাক্ষসী, কুম্ভকর্ণ, জগদ্ধাত্রী, কালি, মনসা, সরস্বতী, শিব, রাধা কৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য  মহাপ্রভু, লক্ষ্মী নারায়ণ, রাম সীতা, দুর্গা, হনুমানসহ  প্রতিমাগুলো।

এদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় প্রথমবারের মতো ২৫টি প্রতিমা তৈরি করে পূজা শুরু করবে সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের আস্তাকাঠি সার্বজনীন শ্রী শ্রী হরি ও দুর্গা মন্দির।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।