ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়ে শিশুদের সুরক্ষায় যেতে হবে বহুদুর: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২২
মেয়ে শিশুদের সুরক্ষায় যেতে হবে বহুদুর: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

ঢাকা: বৈশ্বিকভাবে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। কিশোরীদের প্রথমিক শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্জনও আছে অনেক।

তবুও বহুবিধ নিপীড়ন ও শোষণ-বৈষম্যের শিকার কন্যা শিশুরা অনেকাংশেই ভালো নেই। এই ভালো না থাকা মেয়ে শিশুদের সুরক্ষায় বাল্য বিবাহ রোধ, নির্দিষ্ট বয়সের আগে দ্রুত সন্তান না নেওয়া, আইন বিষয়ে সচেতনতা, সঠিক প্যারেন্টিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১ অক্টোবর) দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘মেয়ে শিশুদের সুরক্ষা: যেতে হবে বহুদূর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন কথা বলেন বক্তারা। দুপুরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কালের কণ্ঠের কার্যালয়ে। আয়োজনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসাইন, জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ফ্যাকাল্টি ডা. হালিদা হানুম আকতার, মেরী স্টোপস বাংলাদেশের ডাইরেক্টর ড. ফারহানা আহমেদ, অ্যাডভোকেসি লিড মনজুন নাহার, পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন, সহসভাপতি ড. এমএসএ মনসুর আহমদ, ডা. মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ডা. এসএম শহিদুল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. তাজউদ্দীন শিকদার, পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি ডা. রোমেন রায়হান, প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ফাতেমা-তুজ-জোহরা পৃথা, এমসিএইচ সার্ভিসের ডাইরেক্টর ডা. মো. মাহমুদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মাহিয়া মেহেরাব পূর্ণাভা।

মূল বক্তব্যে অধ্যাপক আইনুন নাহার বাংলাদেশে কন্যা শিশুদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে সর্বজনীনভাবে নারী ও কন্যা শিশুরা বৈষম্য ও নিপীড়নের মুখোমুখি হলেও আবার সমাজভেদে এর ভিন্নতাও রয়েছে। একটা বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের ‘কন্যা শিশু’ কোন সমগোত্রীয়/সমরুপ দুলু নয়। শ্রেনী, এথনিসিটি, ধর্ম, ভৌগলিক এলাকা, প্রতিবন্ধিতা, সামাজিক অবস্থানসহ নানাকিছুর উপর ভিত্তি করে এই কন্যাশিশুদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভিন্নতাও রয়েছে এবং বৈষম্য ও নিপীড়নেরও নানা মাত্রিকতা রয়েছ। তবে কন্যা শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া এবং তাদের অবস্থার কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটলেও বাস্তবিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বোঝা যায় যে আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেতে হবে বহু দূর।

তিনি বলেন, এজন্য আমাদের বিদ্যমান আইন, নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন করা; অঞ্চল ও চাহিদাভিত্তিক কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা; কন্যা সন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, দৃষ্টীভঙ্গী পরিবর্তনের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সিভিল সমাজ, গনমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা; কৈশর-বান্ধব সেবা কেন্দ্রসমুহকে কার্যকরী করে তোলা; পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষাকে কেবল অর্ন্তভুক্তকরণই নয় বরং যথাযথভাবে শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণ, মনিটোরিং ব্যবস্থার ওপর জোরারোপ করা এবং বৈষম্যমূলক সম্পত্তি আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রথমিক শিক্ষায় লিঙ্গা সমতা অজর্জন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম। এছাড়া ৬৯ শতাংশ কিশোরী তাদের পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করে কিংবা কিছুই ব্যবহার করে না। ১৮ বছরের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবং হাওর, চর অঞ্চল এলাকাভেদে এটি বাড়ছে। ফলে উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে মেয়েদের শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণসহ নানা রকম বঞ্চনার কারণে নারী শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে। এজন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একইসাথে প্যারেন্টিং বিষয়ে আমাদের একটি কারিকুলাম নির্ধারণের সময় এসেছে।
 
তারা বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে দ্রুত বিয়ে দিতে উদ্ধুদ্ব করে বক্তব্য দেওয়ার পরিবর্তে সচেতনতার বার্তা দিতে হবে। জেন্ডার বেস ভাইলেন্স জিরো করে কাউন্সিলিং বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক সময় বাবা-মা অনিশ্চিয়তায় থাকে সন্তানকে নিয়ে। সেদিক থেকে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমে গেছে, যেটা এখন বাড়ানো উচিত। কথা বলা দরকার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও। এছাড়া এসব বিষয়ের তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে। ফাস্ট গ্রেগনেন্সি ডিলে করতে হবে। কিশোরীদের সচেতন থাকতে হবে। আইন সম্পকর্কে তাদের ধারণা দিতে হবে। পারিবারিকভাবে সন্তানকে নিয়ে গড়ে তোলার পদক্ষেপ কেমন হবে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে প্যারেন্টিং গাইড লাইন প্রয়োজন।

বৈঠকের শেষে কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী জানান, গণমাধ্যমে এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য বিভ্রাট রয়েছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে গণমাধ্যম এই বিষয়ে আরও কাজ করবে বলে আমি আশা করি। আর কালের কণ্ঠ কন্যা শিশুর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২২
এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।