ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৬৩ জনের রেশন কার্ড বাতিলের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৬৩ জনের রেশন কার্ড বাতিলের অভিযোগ

ফরিদপুর: ভোট না দেওয়ায় উদ্দেশ্যমূলক ও বেআইনিভাবে এক গ্রামের ৬৩ সুবিধাভোগীর রেশন কার্ড (১০ টাকার চাউল) বাতিলের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের (১ নম্বর ওয়ার্ড) হাসামদিয়া গ্রামের সাহিদ বিশ্বাস, সঞ্জয় শীল, কুদ্দুস মোল্লা, ফাতেমা বেগম, আয়েশা খাতুনসহ মোট ৬৩টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা (রেশন কার্ড) ভোগ করছিলেন। উচ্চ মূল্যের এই বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাউল কিনতে পেরে জীবন যাত্রায় অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল নিম্ন আয়ের এ পরিবারগুলো। কিন্তু চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হবার পর সম্প্রতি নতুন তালিকা প্রস্তুতের সময় রহস্যজনকভাবে তাদের কার্ডগুলো বাতিল করে দেন। মাত্র একটি গ্রাম থেকে একই সময়ে একসঙ্গে এতগুলো কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ শুরু হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ডিসি বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।  

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে চতুল ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি টিম। তারা সরাসরি ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।  

ভুক্তভোগী মো. মাসুদ শেখ, সঞ্জয় শীল সহ একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা গরীব ও অসহায় মানুষ। সাবেক চেয়ারম্যান সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কার্ড করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানকে আমরা ভোট দেইনি এমন সন্দেহ করেই তিনি আমাদের কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। এমনকি কার্ড নবায়নের কথা বলে ট্যাক্সের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২৫০ থেকে শুরু করে ৫০০-৭০০করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যা খুবই অমানবিক। কার্ড বাতিল হওয়ায় আমরা এখন চরম দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছি।  

এ ব্যাপারে চতুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। কার্ড হারিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানিয়ে সহায়তা চেয়েছেন। কান্নাকাটি করেছে। কিন্তু কী করবো আমিতো দ্বায়িত্বে নেই। রেশন কার্ড দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি মানবিক সহায়তা। এ নিয়ে কোনো চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা বা অপরাজনীতি মোটেও কাম্য নয়।

এদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আর্থিক স্বচ্ছলতা, আইডি কার্ডের সমস্যা, একাধিক সুবিধা ভোগসহ নানা কারণে কার্ড বাতিল হতে পারে। এর পেছনে আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা নোংরা রাজনীতির সুযোগ নেই। কে আমাকে ভোট দিয়েছেন বা দেননি সে হিসেব আমি করি না। আমার কাছে সবাই সমান। আমি আমার ইউনিয়নের সব জনসাধারণের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।  

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের অভিযোগের কথা শোনা হয়েছে। এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অতি শিগগিরই ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শুনবেন। এক কথায় তদন্ত চলমান। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।  

এ ব্যাপারে বোয়ালমারীর ইউএনও মোশারেফ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, এখনও কোনো ভুক্তভোগীর কার্ড বাতিল করা হয়নি। কার্ডগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার, খাদ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে।  

ইউএনও বলেন, অনেকেই এখন সচ্ছল জীবন-যাপন করছেন। তাই তাদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাউকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি ঠিক নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।