ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শতভাগ ডিম ছেড়েছে ৫২ শতাংশ ইলিশ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২২
শতভাগ ডিম ছেড়েছে ৫২ শতাংশ ইলিশ

চাঁদপুর: চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৫২ শতাংশ মা ইলিশ শতভাগ ডিম ছেড়েছে, আর ৩২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়বে। সব মিলিয় ডিম ছাড়ার সুযোগ পাবে ৮৪ শতাংশ মা ইলিশ।

জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের একটি টিম। মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন আগে এবং পরে ৭ দিন করে ১৪ দিন এই গবেষণা করে একথা জানানো হয়েছে। গবেষণার তথ্য সংগ্রহ এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আমদানিকৃত অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম। এক কেজি এবং এক কেজির ওপরের ইলিশের সংখ্যাই বেশি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগর উপকূলীয় এলাকার জেলেরা এসব ইলিশ মওজুদ রেখে এখন চাঁদপুর ঘাটে নিয়ে আসছে। আর এসব ইলিশের মধ্যে কিছু ইলিশ আছে পচা। সেগুলোর পেট থেকে ডিম বের করা হচ্ছে এবং আলাদা করে এসব ডিমি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিকেজি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৮শ  টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

মাছঘাটের আড়ৎদার ইকবাল হোসেন বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে যেসব পচা ইলিশ আসছে সেগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয় না। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা মৌসুমি কিছু ব্যবসায়ী ১২-১৫ হাজার টাকা মণ দরে ক্রয় করে সংরক্ষণ করছেন। তারা ডিমগুলো আলাদা এবং মাছগুলো লবন দিয়ে নোনা ইলিশে পরিণত করছেন।

মৎস্য গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ বছর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাগর উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের কিছু অংশসহ ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার ওপর গবেষণা হয়। গবেষণার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মা ইলিশ এ পর্যন্ত ডিম ছেড়েছে ৮ লাখ ৫১৫ কেজি। এতে করে এই বছর ইলিশ জনতায় যুক্ত হবে ৪০ হাজার ২শত ৭৬ কোটি জাটকা। যা গত বছরের তুলনায় ২.৪% বেশি।

তিনি বলেন, টাস্কফোর্সের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মা ইলিশের প্রজনন রক্ষা সফল হয়েছে। যার ফলে এ বছর রেডর্ক সংখ্যক ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। ৫২% ইলিশ শতভাগ ডিম ছেড়েছে এবং ৩২ শতাংশ ডিম ছাড়ারত অবস্থায় আছে। সব মিলিয়ে ৮৪ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পাবে। আমাদের কাজ হচ্ছে এখন থেকে ইলিশের পোনা জাটকাকে লালন পালন করে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। জাটকা সংরক্ষণ হলে ইলিশ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্জন হবে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর দেশে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮অর্থ বছরে ছিল ৫লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন, ১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ছিল সাড়ে ৫লাখ মেট্রিক টন। প্রতিবছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

আশরাফুল আলম বলেন, এই বছর আমরা ভোলা ও স্বন্দীপের বিভিন্ন এলাকায় চ্যানেলগুলোতে গবেষণার কাজ বেশি করেছি। মূলত আমরা গবেষণার কাজে বর্গমাইল নির্ধারণ করি। এরপর এক কিলোমিটারে কতটি নৌকা মাছ ধরে তার পরিসংখ্যান নেই। প্রতি জেলে নৌকা কী পরিমাণ মাছ আহরণ করে এবং তাদের জালের পরিমাণ কত ইত্যাদি পরিসংখ্যান থেকে ইলিশের ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই। অর্থাৎ একটি ইলিশের আকারের ওপর নির্ভর করে কতটুকু ডিম ছাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।