ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঐক্য শুধু মুখে নয়, পাশে দাঁড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
ঐক্য শুধু মুখে নয়, পাশে দাঁড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনেতিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায দেশে রাজনেতিক ঐক্য শুধু মুখে বললে হবে না, নিজে থেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ঐক্যে বিশ্বাসী, যারাই আসবে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে।

বুধবার (০২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলের সদস্যদের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সংসদ সদস্য সুলতান মনসুরের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তার পরপরই স্যাংশন দেওয়া—এই স্যাংশন দেওয়ার পরেই কিন্তু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই টালমাটাল। এটা শুধু বাংলাদেশ না, বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে আমি মনে করি। ইউরোপ আমেরিকায় প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম গ্রেট ব্রিটেনে ৮০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজারের সব কিছু রেশনিং করে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কিন্তু আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি—আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং শুধু ঢাকায় নয়, একেবারে উপজেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে। মাঝে মাঝে বাজার থেকে পণ্য হাওয়া হয়ে যায়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই, এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে না। অনেক সময় তারা এগুলি লুকিয়ে রাখে এবং জিনিসের দাম কৃত্রিম উপায়ে বাড়ায়। এখানে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। আমাদের যে মনিটরিং ব্যবস্থা, তাদের খুঁজে বের করা হয়, ধরা হয়, ইতোমধ্যে অনেক পণ্য খুঁজে বের করা হয়েছে এবং বাজারজাত করা হয়েছে।

বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় একাত্তরের মতো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে কিনা—জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হকের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধের ভয়াবহতা, ভবিষ্যৎ—এ বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। এখানেও কেউ কেউ বলেছেন, আমি এ ধরনের কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। মানুষকে ভয় পাওয়ার জন্য না, সতর্ক করার জন্য, শুধু সতর্ক করার জন্য না, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর, আমরা আমাদের ফসল ফলাবো, খাদ্য উৎপাদন করবো। আমরা ব্যবহার করবো এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে এটা আমরা বিশ্বে বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ সদস্য বলেছেন সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া—আমার প্রশ্ন হলো, যখন দেশ এরকম একটা ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দলে আছেন, আমি সকলের কথা বলছি না, তাদের মাঝে আমি ওই উদ্বেগ দেখিনি। বরং দেখেছি সুযোগটা নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই যেন তারা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এটা করাটা কি সমীচীন হচ্ছে, এটা তো সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে এই অনুভূতিটা কোথায়, সেই অনুভূতিটা তো থাকতে হবে দেশের প্রতি। দেশপ্রেম তো থাকতে হবে। আজকে সারা বিশ্বব্যাপী একটা সংকট, এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা—এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না, নিজে থেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়েই কাজ করি। আমরা সব সময় ঐক্যে বিশ্বাস করি, যারাই আসবে, আমরা একসঙ্গে কাজ করবো—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এক সম্পূরক প্রশ্নে দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি—ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু মানুষ থাকে এবং সেই সব লোকের কথাটাই কিন্তু সংসদ সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলির নাম তিনি নিয়েছেন, তার মধ্যে একটা পত্রিকা আমি পড়ি না। পড়ি না এই কারণে তারা সব সময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাক চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সব সময় তারা পছন্দ করে, পছন্দ করে এই কারণে যে, তাদের একটু কদর বাড়ে। সারা বিশ্বে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশে, হ্যাঁ বাংলাদেশে তো বেড়েছে সেটা তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে, যারা ক্রয় ক্ষমতা রাখে না তাদের আমরা দিচ্ছি। কিন্তু হেড লাইন দিয়েছে, সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটাটা দিয়েছে সেখানে কিন্তু বাংলাদেশ নাই, হিসাবেও আসেনি। বাংলাদেশ কিন্তু কয়েকটা দেশ থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে হেড লাইন করে যা বিভ্রান্তিমূলক। ভেতরে গিয়ে আপনি দেখবেন সেটা কখনও সঠিক না, সঠিক তথ্য তারা দেয় না, মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়। আর যে প্রতিষ্ঠানটির (সিপিডি) কথা তিনি (রুমিন ফারহানা) উল্লেখ করেছেন, ওই প্রতিষ্ঠান তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন যখন সেনা শাসন ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তাদের একটু কদর বাড়তো। কদর বাড়বে এই আশায় তারা বসে থাকে। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট যাতে না হয়, তার জন্য যা যা করণীয় আমাদের সাধ্যমতো  আমরা করে যাবো।

তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আমি বার বার বলেছি, দুর্ভিক্ষ—আমরা কেন এটা তো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও বলেছে। আমি আগে বলেছিলাম সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং স্যাংশন, এই স্যাংশন দেওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কাজেই এই স্যাংশন প্রত্যাহার করা এবং যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি তো আমি জাতিসংঘেও বসে করে এসেছি। আমি সব সময় বলি, এখানে আমাকে অনেকে বলেছেন, এ কথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হলো জানি না, আজ সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, আমি ইংল্যান্ডের কথা বলতে পারি, সেখানে আমাদের অনেক লোক আছে। বহু মানুষ, অধিকাংশ মানুষ আজকে কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই, তারা কিনে খেতে পারে না। তারা তিন বেলার খাবার কিনতে পারে না, এক বেলার খাবার তাদের বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই ভাবে ইউরোপ-আমেরিকায়, সেখানে যে হারে দারিদ্র্য বেড়েছে এবং কোনো কোনো জায়গায় দেখবেন সেখানে কোনো কোনো মানুষ খাবার পাচ্ছে না। থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই, গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থা এই ধরনের, শীত এসে যাচ্ছে সেখানে তারা ঘর গরম করতে পারছে না, ঘর গরমের বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। জার্মানিতে গরম পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছে না, কারণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা, বাংলাদেশে এই সমন্ত দোষ টোকাতে না গিয়ে দেশের জনগণের জন্য কী করা যায়, সংসদ সদস্য হিসেবে সেটাও দেখা উচিত। আর যে পত্রিকা, যে প্রতিষ্ঠান সবাইকে আমার ভালো চেনা আছে। আমরা জনগণের পাশে আছি, থাকবো। তারা যেটা বলছে বলতে দিন, আমি আমার কাজ করে যাবো। আমি জনগণের পাশে আছি, জনগণের সহায়তা দেওয়া, সেটা আমি দিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।