ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সমস্যা সমাধান ছাড়া ই-টিকিটিং টেকানো সম্ভব না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
‘সমস্যা সমাধান ছাড়া ই-টিকিটিং টেকানো সম্ভব না’

ঢাকা: আধুনিক পরিবহন সেবা ই-টিকেটিং ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা দাবি করেন পরিবহন খাতে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এ খাতের আমূল সংস্কার করা না গেলে ই-টিকেটিং সিস্টেমে সিটিবাস সার্ভিস টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। কেননা ই-টিকিটে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া আদায় নিশ্চিত করায় যাত্রী ভাড়া কমে আসছে, ফলে বাস মালিকের আয়ও কমে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাসে বাসে কোম্পানির জিপি ও অদৃশ্য খাতের রুট খরচ বন্ধ করা না গেলে অনেক পরিবহন মালিককে লোকসান দিয়ে বাস চালাতে হবে। যানজট, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে সিটি সার্ভিসের বাস খাতে নতুন বিনিযোগ আসছে না। ফলে লোকসানের কারণে এ খাত আগামীতে গভীর সংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাকা সিটিবাস সার্ভিসে ই-টিকিটিং যাত্রীদের প্রত্যাশা শীর্ষক বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।  

সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কর্তৃক বাসে বাসে দেওয়া ই-টিকিটের ছবি ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির চার্টের নমুনা প্রদর্শন করা হয়।

সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, টিকিট মানে সেবা মূল্যের রশিদ। আন্তর্জাতিক ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি পণ্য বা সেবামূল্যের রশিদ দেওয়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর নগরীর সিটি সার্ভিসের বাসে ই-টিকিটিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে এটি পূরণে এগিয়ে আসায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। প্রতিটি টিকিটে টিকিট দেওয়া ব্যক্তির নাম, বাসের নিবন্ধন নাম্বার, যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, দূরত্ব, ভাড়ার অংক, ভ্রমণ তারিখ ও অভিযোগ কেন্দ্রের নাম্বারগুলো  থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে প্রদত্ত ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় এসব পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। কোনো কোনো টিকিটে শুধুমাত্র ভাড়ার অংক লেখা রয়েছে। যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, বাসের নাম ও নাম্বার নেই, ফলে এসব টিকিট নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে যাত্রীদের প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংগঠনের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শুরুতেই ই-টিকিটিং নিয়ে যাত্রী বাস মালিক-শ্রমিকের মধ্যে নানা মিত্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ই-টিকিটিং চালুর পর বিভিন্ন রুটে মালিকেরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। ই-টিকিটিং এ চলাচলকারী বাসে দূরত্বের ব্যবধানে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন নগরীর যাত্রী সাধারণ যেমন রামপুরা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার আগে এ পথে ভাড়া ছিল। ২০ টাকা, ই-টিকিটিংয়ে এ পথের ভাড়া আদায় হচ্ছে ২৫ টাকা। অথচ আট কিলোমিটারের পথে ২০ টাকা ভাড়া আদায় হওয়ার কথা। খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-২ নম্বরের আগে ১৫ টাকা ভাড়া আদায় হলেও ই-টিকিটিং চালুর পর ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কোনো কোনো পথে ভাড়া কমে আসার নজিরও রয়েছে, যেমন খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-১১ পথে নিয়মিত যাত্রী রাকিবুল হাসান আগে এ পথে ৩০ টাকায় যাতায়াত করলেও ই-টিকিটিং চালুর পর থেকে নিয়মিত ২২ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করছেন। আসাদগেইট থেকে মিরপুর-১ আগে ২৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও ই-টিকিটিংয়ে এ পথের ভাড়া ১৩ টাকায় নেমে আসে। শেওড়াপাড়া থেকে ধানমন্ডি-২৭ পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও ই-টিকিটিংয়ে পথের ভাড়া ১৩ টাকায় নেমে আসে। রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হলেও ই-টিকিটিং এ নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। মিরপুর-১ থেকে গাবতলী আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা ই-টিকিটিংয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। মিরপুর-১ থেকে সাভার আগের ভাড়া ৪০ টাকা হলেও ই-টিকিটিংয়ে ৩০ টাকায় নেমে আসার চিত্র বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, ভাড়া নির্ধারণের শর্ত অনুযায়ী চালক-সহকারীর নিয়োগপত্র, বেতন এবং ওভারটাইম নিশ্চিত করা জরুরি। বাস উচ্ছেদ করে বাসের সার্বিক পরিবেশ উন্নত করে, সিটি সার্ভিস আধুনিক বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা গেলে, সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করে বাসের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড লেনের ব্যবস্থাসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে মানুষ ধীরে ধীরে বাসমুখী হবে। মোটরসাইকেলসহ ছোট পরিবহনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, ফলে যানজট ও মানুষের যাতায়াত ব্যয় কমে আসবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা পজিটিভ উদ্যোগ, দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল ছিল এটি। আমরা সাড়ে পাঁচ হাজার বাসের মালিকদের নিয়ে মিটিং করে ই-টিকিটিং এর সিদ্ধান্ত নেই। এর আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে সিটিং ও গেট লক বন্ধ করি। এরপর ওয়ে বিল বাতিল করি। দেশ ডিজিটাল হয়েছে ধীরে ধীরে সব জায়গায় ডিজিটাল সেবা হবে। রাজধানীতে লক্কর-ঝক্কর বাস আর চলবে না, তথাকথিত নৈরাজ্য দূরীকরণের জন্য আমরা কাজ করছি।

বিআরটিএ'র ঢাকা বিভাগের (ইঞ্জিনিয়ারিং) পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ই-টিকিটিং ব্যবস্থা এটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটির মাধ্যমে সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং কমে আসবে, সড়কে নিরাপত্তা ফিরে এলে দুর্ঘটনা কমবে। সড়কে আমাদের মনিটরিং চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেন, সারাদেশে এটা ভালো ব্যবস্থা, কিন্তু এটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ওয়ে বিল তুলে দেওয়া হলে সেই ভাবেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।  

যাত্রী কল্যাণের উপদেষ্টা শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, আমরা অনেক দিন ধরেই যাত্রীদের অসুবিধা গুলো তুলে ধরছি। তবে আমরা যাত্রীরাও অনেক কিছু মানছি না। ই-টিকিটিং একটি স্বস্তি দায়ক যাত্রার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা ই-টিকিটিং নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। আমরা চাই অথরিটি এগুলো যথাযথ মনিটরিং করবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শিল্পে নিম্নতর মজুরি বোর্ডের সদস্য ইনসুর আলী, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মনজুর হোসন ঈশা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।