ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বায়তুল মোকাররমের উন্নয়নে অনুমতির অপেক্ষায় মুসল্লি কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
বায়তুল মোকাররমের উন্নয়নে অনুমতির অপেক্ষায় মুসল্লি কমিটি ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত দেশের একমাত্র জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। এ মসজিদে প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।

অনেকেই আসেন জাতীয় এ মসজিদটি দেখতে। দেশের ঐতিহ্যের অংশ এ মসজিদটিতে নামাজ পড়তে এসে আধুনিক সুবিধা না পাওয়া ও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মুসল্লিরা।  

বিশেষ করে মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার-ওজুখানার অভাব, ওজুর পানির সমস্যা, সাউন্ড সিস্টেমের সমস্যা, কাতারে দাঁড়ানোর জায়গার স্বল্পতা, পর্যাপ্ত মুয়াজ্জিনের অভাবসহ এসব সমস্যা মুসল্লিদের কাছে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে মুসল্লিদের পক্ষ থেকে ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’ সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন।  

সম্প্রতি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান অথবা ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’ নিজেরাই সেসব কাজ করে সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নকাজের জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে।  

‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’র প্রধান উপদেষ্টা ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে মুসল্লি কমিটি উন্নয়নকাজগুলো দ্রুত করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।  

জাতীয় মসজিদের সমস্যাগুলো সমাধান, আধুনিকায়ন ও উন্নয়নকাজ করার অভিপ্রায় নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) মসজিদ প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’ ও মুসল্লিরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন দেশের জাতীয় মসজিদে আন্তর্জাতিকমানের ইসলামিক গবেষণা করার জন্য ইসলামিক লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টার, অত্যাধুনিক জেনারেটর, উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আধুনিক ওজুখানা দেখা যায়। কিন্তু আমাদের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ হলেও সেখানে মুসল্লিদের জন্য এ ধরনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই।  

‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’র সভাপতি মো. ইয়াকুব আলী বলেন, সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে মসজিদের উন্নয়নকাজের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের নিয়ে বসে একটি কমিটি করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আমাদের যেন দ্রুত অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির নেতৃত্বে আমরা কাজগুলো করতে পারি।  

তিনি বলেন, জাতীয় এ মসজিদটি জাতীয় মর্যাদায় নেই। এখানে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। সমস্যাগুলো যেন দ্রুত সমাধান ও উন্নয়নকাজ শুরু করা যায় সেজন্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজন।  

মসজিদের বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মানিক।  

তিনি বলেন, মুসল্লিদের জন্য আধুনিক শৌচাগার ও মানসম্মত ওজুখানা করা প্রয়োজন। মসজিদের পূর্ব সাহানে যে শৌচাগার তা বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের জন্য করা। সেই শৌচাগার ব্যবহার করেন মুসল্লিরা। কিন্তু পর্যাপ্ত মুসল্লি তাও ব্যবহার করতে পারেন না। মসজিদের খালি জায়গায় শৌচাগার করা গেলে মুসল্লিরা উপকৃত হবেন। বর্তমানে যে ওজুখানা সেখানে ওজু করতে গেলে মুসল্লিদের গায়ে পানির ছিটা পড়ে। ওজুখানাটি মানসম্পন্ন করার সুযোগ আমরা নিতে চাই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনের পশ্চিমে আধুনিক শৌচাগার করা যেতে পারে।  

মসজিদের কাতারের দূরত্ব কম থাকায় রুকু ও সিজদার সময় একজনের শরীর আরেকজনের সঙ্গে লেগে যায় জানিয়ে মিজানুর রহমান মানিক বলেন, কাতারের দূরত্ব একটু বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য টাইলস-পাথরগুলো তুলে নতুন করে বসানো জরুরি হয়ে পড়েছে।  

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই এ মসজিদে হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়তে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, শীতকালে গরম পানির ব্যবস্থা করা গেলে মুসল্লিদের কষ্ট লাঘব হবে।

উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম ও জেনারেটর না থাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় হাজার হাজার মুসল্লির সমস্যা হয় জানিয়ে মিজানুর রহমান মানিক অটোমেটিক সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে বিশেষ করে খুতবা শোনার ব্যবস্থা এবং বড় জেনারেটর বসানোর জন্য আহ্বান জানান।

মসজিদের মুসল্লিদের জন্য একটি বিশ্বমানের ডিজিটাল লাইব্রেরি স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেটি হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। সেটি মসজিদের খতিবের রুমের পূর্বদিকে স্থাপন করা যেতে পারে।  

মসজিদের মুসল্লি কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর সাহেব এসব কাজ করার বিষয়ে অনেক আন্তরিক। এসব কাজ যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় সেজন্য অনুমতির প্রয়োজন। মুসল্লিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমরা গর্বিত হই।

মসজিদ ও মুসল্লিদের জন্য মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীরের আন্তরিকতা নিয়ে তারা বলেন, তিনি বেশকিছু সংখ্যক মুসল্লিকে এ বছর ওমরা হজে পাঠানোর ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল উদ্দিন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন গাজী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া ফয়সাল আহমেদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আতাউর রহমান, মুসল্লি কমিটির সদস্য জালাল সরকার, নাজমুল হুদা ও আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।