ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গুদামে চাল ঘাটতি, খাদ্য কর্মকর্তা লাপাত্তা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
গুদামে  চাল ঘাটতি,  খাদ্য কর্মকর্তা লাপাত্তা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য গুদামে প্রায় ২১৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতির অভিযোগে গুদাম সিলগালা করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

গুদামের চাল ঘাটতির ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন লাপাত্তা হয়েছেন।

অন্যদিকে, বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান, ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) মো. তারিকুজ্জামান, মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেন ও চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম উপস্থিত থেকে গুদামের নথিপত্র যাচাই করে গুদামটি সিলগালা করেন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সানোয়ার হোসেন প্রায় ২১৫ মেট্রিক টন চাল আত্মসাৎ করার পর গত চার মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি কার্ডের চাল ও ডিলারদের ১৫ টাকা কার্ডের চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে উপজেলার হতদরিদ্ররা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদামের নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার জানান, উপজেলার সাতজন ডিলারের মধ্যে নির্দিষ্ট এক ডিলারের সঙ্গে আঁতাত করে ওসিএলএসডি প্রায় কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ করে লুকিয়ে রয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রশিক্ষণে দেশের বাইরে থাকায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তারিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি আসলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা। গুদামের নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে আমরা অনেক গড়মিল পাই। এক পর্যায়ে বড় অংকের চাল আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, গুদামের চাল আত্মসাতের ঘটনায় মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর দুইজন সদস্য হলেন চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম ও ঢাকা বিভাগীয় অফিসের একজন কর্মকর্তা।

তারিকুজ্জামান বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।

চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল আলম বলেন, আপাতত গুদামটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে উপজেলা ওসিএলএসডি সানোয়ার হোসেন গা ঢাকা দিয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে কয়েক দফায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং গুদামে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

মুঠোফোনে গত কয়েকদিন ধরে সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে একবার ফোনটি রিসিভ করলে ভাই আমি অসুস্থ, পরে কথা বলবো বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান, ওই ওসিএলএসডি গত চার মাস ধরে আমার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেননি। একইভাবে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ২১৫ মেট্রিক টন ভিজিডি কার্ডের চাল তিনি আত্মসাৎ করেছেন। আমি গত বুধবার রাতে ওসিএলএসডি’র নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান, খাদ্য গুদাম সিলগালার ব্যাপারে এখনো আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।