ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সচিব সভায় যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
সচিব সভায় যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: দীর্ঘ এক বছর পর অনুষ্ঠিত হলো সচিব সভা। সভায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নানা দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দেন, তা নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সভা সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচিব সভায় ১৭ জন সচিব তাদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি বিষয় আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সচিব সভায় ১২-১৩টি বিষয় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূল বিষয়গুলো হলো- দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী করা যায়? এটাই প্রথমে ছিল। আমরা এখন একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি। গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ লাখ টন খাদ্য আমাদের মজুদ রয়েছে। আভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ক্রয় ও প্রয়োজনীয় বিদেশ থেকে আনা, সেটা নিশ্চিত করতে আলোকপাত করা হয়। খাদ্যের মজুদ যাতে ১৫ লাখ টনের নিচে না নামে, সেই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, তিন-চারটা প্রোগ্রাম মানুষকে একটু স্বস্তি দিচ্ছে। যেমন- ওএমএস, বিশেষ ওএমএস, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ভিজিডি, ভিজিএফ, টিসিবির কার্যক্রম যাতে নিয়মিত পরিচালিত হয়, তাহলে অনেক মানুষ এখন থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পাবেন।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদি সচিব বলেন, এর সঙ্গে সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, আর্থিক বিধি অনুসরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার বিষয়গুলো জড়িত।

আগামী ২০২৩ সালে আসন্ন সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, আমরা যে খরচ করব সেগুলো খুব যৌক্তিক হতে হবে। বিশেষ করে, আমরা বিদেশ থেকে যে জিনিসপত্র আনবো, সেগুলোর মধ্যে এনার্জি, সার, খাদ্য -এগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপিটাল মেশিনারিজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেগুলো আমাদের কম প্রয়োজন, সেই খরচগুলো কমাতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকল্পে যেন সম্ভাব্যতা যাচাই ঠিকভাবে হয়। ড্রাই, ডিজাইন ও প্রাক্কলনটাও যেন ঠিকভাবে হয়। দক্ষ লোকজন দিয়ে যাতে এগুলো করা হয়।

একইসঙ্গে বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের বিষয়ে সবাইকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সতর্ক থাকতে বলেছেন।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিদেশি ঋণে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন তারা আরও বেশি সচেষ্ট থাকেন। উন্নয়ন বাজেট সংকোচন করা হয়নি। অপারেটিং কস্ট-এর ক্ষেত্রে সংকোচন করা হয়েছে।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সবচেয়ে বড় সমাধান কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন যে, গত ৩/৪ বছরে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এগুলো বেশি করে ছড়িয়ে দিতে বলেছেন তিনি। এগুলো উৎপাদনে নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পতিত জমিতে স্থানীয় ভালো জাত চাষাবাদ করতে হবে।

তিনি বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দশটি প্রযুক্তি আছে, এগুলো ব্যবহার করে কীভাবে আমাদের উৎপাদন বাড়ানো যায়। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে সেমি কন্ডাক্টারের একটা বড় বাজার আছে। আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যে থ্রি-ট্রিলিয়ন ডলার মার্কেটিং হবে। ইতোমধ্যে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। সেখানে আমরা ঢুকতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫/২০ বিলিয়ন ডলারের একটা বড় পরিমাণ রপ্তানি করা যাবে।

পোশাক খাতের বাইরে প্রধানমন্ত্রী বিকল্প উৎপাদন ও রপ্তানির দিকে দৃষ্টি দিতে বলেছেন বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম।

সঙ্গে রেমিট্যান্স বাড়াতেও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাণিজ্য সচিব ও অন্যান্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জমির ই-রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন ও রেকর্ড সংশোধনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ১৭টি উপজেলায় এ বিষয়ে একটি প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। আগামী মার্চ মাস থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে চলে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী সুশাসনের ওপর জোর দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যাতে মানুষের ভোগান্তি কমে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইনডাইরেক্ট আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনকে। চারদিকে এত কথাবার্তা উঠছে, আসল সিনারিওটা কী? সেটা তিনি শিগগিরই দেখে অবহিত করবেন আমাদের।

জঙ্গির বিষয়ে একটু বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন, পুলিশ কিছু জঙ্গিকে (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ডিটেক্ট করেছে এবং তার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। বাকি কিছু পালিয়ে গেছে। তাদেরকে ট্র্যাক করে ধরা এবং জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া এবং তারা যেনো কোনোভাবেই কারো কোনো শেল্টার বা সহায়তা বা কোনো আর্থিক বেনিফিট নিতে না পারে- সেদিকে সবাইকে একটু দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দুই জন জঙ্গি ছিনতাই হয়েছে- এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভায় আমরা গত বুধবারের দিন আলোচনা করে অনেক ইনিশিয়েটিভ নেওয়া হয়েছে। বুধবার আমরা সব সংস্থাসহ সবাই বসে কীভাবে কী করা যায়, অনেক ইনফরমেশন তারা অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এমআইএইচ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।