ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

অফবিট

রহস্যময় প্রাণী জায়ান্ট স্কুইড

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
রহস্যময় প্রাণী জায়ান্ট স্কুইড

জেলেদের নৌকায় একবার হামলা করেছিল একটি সামুদ্রিক দৈত্য। নৌকা থেকে তাদেরকে টেনে নামায় এটি এবং সমুদ্রের নিচে ডুবে মারা যান তারা।


 
জেলেরা দৈত্যটিকে ‘ক্রাকেনকে’ নামে উল্লেখ করেছিলেন। এখন আমরা জানি, গল্পের সেই ক্রাকেনকে বাস্তবে ছিল জায়ান্ট স্কুইড বা আরকিটেউথিস, যা সেফালোপোডা গোত্রের প্রাণী। বিশ্বের বেশিরভাগ সমুদ্রে বসবাস রয়েছে এদের।

রকেটের মতো দেখতে সামুদ্রিক প্রাণী জায়ান্ট বা দানব স্কুইড পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় বৃহৎ প্রাণীদের একটি। রঙ পরিবর্তন আর বিশালাকৃতির হওয়ার ক্ষমতা এবং পরিবর্তিত নতুন-নতুন রঙের ছটা নিয়ে এ প্রাণীটি মানুষের কাছে বিস্ময়করও।
 
অক্টোপাসও স্কুইড প্রজাতির একটি প্রাণী। তবে স্কুইডের আছে অক্টোপাসের চেয়ে দু’টি বেশি অর্থাৎ ১০টি হাত৷ মানুষ বা মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতো দেখতে একটি চোখ ও বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিস্ক রয়েছে তাদের। একটি শক্ত খোলসের বাইরে থাকা হাতগুলোর মধ্যে আটটি ছোট ও দু’টি লম্বা৷ লম্বা হাত দিয়ে তারা শিকার ধরে আর ছোট হাত দিয়ে শিকার মুখে দেয়৷

অসংখ্য চোষক বা কর্ষিকা ও ঠোঁট  দিয়ে শিকারকে আঁকড়ে ধরে মুখের কঠিন অংশ দাঁত দিয়ে ফুটো করে শিকার খায় স্কুইড।

২৫০ প্রজাতির মধ্যে কিছু-কিছু প্রজাতির স্কুইড সমুদ্রের অনেক গভীরে থাকে আর কয়েকটি থাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের ঠিক নিচে৷  

স্কুইডদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জায়ান্ট স্কুইড গভীর সমুদ্রের শুঁড়ওয়ালা শামুক হিসেবে পরিচিত। জলের উপরিভাগে এদের সচরাচর দেখা যায় না। তবে কখনও কখনও মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে বলে জানান জাপানের ইউজো অ্যাকুরিয়ামের অধ্যক্ষ মিতসুহিরো ফুয়া।

জায়ান্ট স্কুইড সমুদ্রের সবচেয়ে বড় অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যারা মানুষকেও হত্যা করতে সক্ষম। তবে তারা কতো বড় হতে পারে, আমরা এখনও তা জানি না।

জায়ান্ট স্কুইডের শরীরের বড় যে অংশটি সংকুচিত বা প্রসারিত হয় এর আকারের সঙ্গে মাথা ও কর্ষিকাসহ যোগ করে স্কুইডের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য মাপা হয়।

ইউরোপে ১৬৩৯ সালে প্রথম দেখা গেলেও জায়ান্ট স্কুইডের প্রথম ছবি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। ২০১৪ সালে তাদের জীবন ও বাসস্থান নিয়ে প্রথম ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। ছবি ও ভিডিও ধারণের স্থান দু’টি ছিল জাপানে।

যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড সেন্ট অ্যাণ্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ড. ক্রিস প্যাক্সটন বলেন, ‘১৬৩৯ সালে যখন প্রথম জায়ান্ট স্কুইড আবিষ্কৃত হয়, তখন সেটিকে সবচেয়ে বড় মাপের বলে মনে করা হতো। কিন্তু পরে এর চেয়েও বড় আকারের জায়ান্ট স্কুইড দেখা গেছে’।

তিনি জানান, ‘এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৬০টি দানব স্কুইডের নমুনা মাপা হয়েছে। সাধারণভাবে ৫.৮৩ থেকে ২৭.৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যে সংকুচিত-প্রসারিত হতে পারে এ প্রাণীটি। বৃহত্তম স্কুইডটি বিস্ময়করভাবে ৫৩ মিটার দীর্ঘ ছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মালদ্বীপে দেখা গিয়েছিল। আর এর শক্ত খোলসের দীর্ঘতম নির্ভরযোগ্যভাবে মাপা দৈর্ঘ্য ছিল ২.৭৯ মিটার’।

তবে এর চেয়েও বড় আকারের স্কুইড পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন লেখক ড্যারেন নেইশ। তিনি তার একটি নতুন বইয়ে লিখেছেন, জায়ান্ট স্কুইডের পুরো শরীরের পরিমাপ করা কঠিন। কারণ, যখন পানি থেকে ওঠানো হয়, তখন এটির নরম টিস্যু ইলাস্টিকের মতো প্রসারিত বা সংকুচিত হতে পারে। খোলস বা শক্ত আবরণের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে পারে মুহূর্তের মধ্যেই।

নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালীতে আটকা পড়া জায়ান্ট স্কুইডটি এখন পর্যন্ত প্রাণীটির বৃহত্তম মৃত নমুনা। ১৮৭৯ সালের মে মাসে পাওয়া এ স্কুইডটির মোট দৈর্ঘ্য ১৪.২৮ মিটার।

স্কুইডও অক্টোপাসের মতোই রং পরিবর্তন করতে পারে। বিপদে পড়লে স্কুইড এক ধরনের রঙিন কালি ছুড়ে মারে, যাতে করে পানিতে রং ছড়িয়ে পড়ে৷ এর ফলে শিকারিরা তাদের দেখতে পায় না এবং তখন তারা দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে পারে৷

বড়-বড় স্পার্ম তিমি, যা ২০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, এরাই জায়ান্ট স্কুইডদের প্রধান খাবার। এসব তিমিকে অনুসরণ করে ধরে হত্যা করে খেয়ে ফেলতে সক্ষম দানব স্কুইড।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এএসআর/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।