সাধারণ রোজগেরে মানুষদের নুন আনতে পান্তা ফুরালেও ব্যবসায়ীরা চিরায়ত নিয়মেই বিত্তশালী হয়। এই বিত্ত কিন্তু বিনাশ্রমে ও পুঁজিতে আসে না।
ব্যবসায়ীরা টাকা রোজগারের কষ্ট ও টাকার মূল্য বোঝেন। ব্যবসায়ীদের জীবনবিলাসী। তারা জীবনকে উপভোগ করেন কিন্তু দু’হাতে অকারণে টাকা ওড়ানোর মতো অপরিপক্ক কাজে যান না। অবশ্য অনেক ব্যবসায়ীর `বাস্তবজ্ঞানহীন’ সন্তানেরা টাকা ওড়ানোর অপকর্মে মাতেন।
বাংলাদেশে সহজে বিনাকষ্টে টাকা রোজগার করেন দুর্নীতিবাজেরা। সামান্য একটা ফাইল নড়াচড়ায় লাখ টাকা হাত বদল হয়। ইমপোর্টের পণ্যের জাতীয়তা ‘এইচ এস’ কোড বদলে হয় কোটি কোটি টাকার ‘বাণিজ্য’। কোটি টাকার সম্পদ রেজেস্ট্রি হয় দান-পত্রের আবরণে। বিভিন্ন পদে থাকারা এতো সহজে বিনা পুঁজিতে-শ্রমে এতো দ্রুত টাকা কামান ! সেই টাকা ওড়ানোর মধ্যে কোনো দ্বিধা দেখা যায় না। দুর্নীতিবাজেরা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ও সমাজে নিজেদের ‘সাফল্য’ প্রমাণের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। এলাকার দামি বাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গ্রামের `চোখা` (সবচে ভালো) জমি, ব্যতিক্রমী মডেলের গাড়ি কিনেই ক্ষ্যান্ত হন না; বরং প্রকাশ্যে লোক দেখানো ‘দান-খয়রাতেও’ এগিয়ে থাকেন।
কোরবানীর সবচেয়ে দামি গরু তাদের বাড়ির আঙ্গিনার ‘শোভাবর্ধন’ করে। বাচ্চা গরুর আকৃতির ছাগল ঈদের বেশ ক’দিন আগ থেকেই প্রতিবেশীদের ঈর্ষার জন্ম দেয়। বাজারের বড় মাছটা তাদের বাজারের থলিতে ঢুকে পড়ে বিনা দামাদামিতে। ঈদের লাখ টাকা দামের শাড়ি-লেহেংগা বিনাপ্রশ্নে গিন্নি-মেয়ের শরীরের রোশনাই বাড়ায়। নো কোশ্চেন আস্কড!
বাংলাদেশে যারাই দুর্নীতির কারণে গ্রেফতার বা আটক হন, দেখা যায় সব শশুর শ্যালকের সূত্রে পাওয়া। যেন সব শ্বশুরই কোটিপতি ছিলেন! এমন মানুষকে জানি, যার শ্বশুর দিন এনে দিন খেতেন। বেচারা নিজেও জানেন না মেয়ের জামাইর কল্যাণে উনার নামেই দু’তিনটে ফ্ল্যাট। বেশির ভাগ শশুরের নিজেরই ট্যাক্স ফাইল নাম্বার নেই। অথচ উনারা জামাইকে বিশাল বিষয় সম্পত্তি দান করেন! বাংলাদেশের কোনো দুর্নীতিবাজ ধরা খাবার পর নিঃস্ব বা ফকির হয়ে যাননি। কেবল একটা ‘পার্সেন্টেজ’ খসে গিয়ে বাদবাকিগুলো সার্ফ-সাদা! ভাগ বাটোয়ারায় হ্যাপি ফ্যামিলি এন্ডিং।
এবার পহেলা বৈশাখে কুড়ি হাজার টাকা জোড়ার ইলিশ যারা কিনেছেন, তাদের রোজগারের টাকাটা নিঃসন্দেহে বিনাকষ্টের। এই অনায়াস খরচের মানুষগুলো কারা? উনাদের পরিচয় কি? যতদূর জানি, আমাদের রাজস্ব বিভাগের একটা ইন্টেলিজেন্স টিম বা গোয়েন্দা ইউনিট আছে। তাদের কাজ-কর্ম বা সাফল্য কি কি জানতে বড্ড ইচ্ছে করে। নাকি ইলিশ কেনা মানুষগুলো খোদ এনবিআরের সদস্য? কুড়ি হাজারে ইলিশ, বিশ লাখ টাকায় গরু কেনা মানুষগুলোর নামধাম পরিচয় ছবি প্রকাশ করা কি মানা?
অর্থমন্ত্রী খালি নতুন রাজস্ব খাত খোঁজেন। অথচ বাড়ির পাশেই আরশীনগর সেথায় ট্যাক্স ফাঁকিদাতা বসত করে। মন্ত্রী ঘর থেকে দু’পা বাইরে ফেলিয়া, দুই চক্ষু মেলিয়া দেখেন না কেন? সমস্যাটা কোথায়?
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।