ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘এই বেয়াদবকে শাস্তি দিতে হবে’

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১২
‘এই বেয়াদবকে শাস্তি দিতে হবে’

প্রথমেই আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার, জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে অগ্রপথিক সেনানী, দেশের এই বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষক এতদিন শুধু মাঠ-ময়দানের আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের কাতারেই থাকেননি, হুমায়ুন আজাদের ওপর নৃশংস হামলার ভয়ংকর দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও নিরাপোস সাহসে সশরীরে ট্রাইব্যুন্যালে এসেছেন; একাত্তরের চিহ্নিত খুনি, যুদ্ধাপরাধী, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সদা বিতর্কিত দুর্মুখ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন!

মূলত তার মতো ব্যক্তিত্বের সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে দেশের অন্যতম শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচার কার্যক্রমে বিশেষ মাত্রা যোগ হলো।

হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব ভ্রাতৃত্রয়ের পিতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আজকের কারান্তরীণ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সম্ভবত ব্যক্তিগত নিরাপত্তাভঙ্গের আশংকায় প্রসিকিউশনের অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের কেউই সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুন্যালে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। কিন্তু অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার সে ভয়কে জয় করতে পেরেছেন বলে তাকে অভিনন্দন। এর সঙ্গে বিজয় ঘোষিত হলো আরেক সত্যের। তাহলো সৎ মানুষেরা সব সময় সাহসী হন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাদের সামনে তেমনই একজন সমুজ্জ্বল মানুষ। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক নানান টানাপোড়েনের এই দেশে তার মতো সৎ মানুষদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

একাত্তরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সূত্রে সেখানকার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও  ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরাসরি একটি যোগাযোগ ছিল আনিসুজ্জামানের। দেশ তখন আন্দোলনে উত্তাল। তার মতো লোক কী তখন চুপ করে বসে থাকতে পারেন?  বাঙ্গালির স্বাধিকার আন্দোলনের সময়ে পক্ষে-বিপক্ষের মানুষজনকেও তিনি সরাসরি চিনতেন। সাকা’র বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীকেও চিনতেন। সাকার হাতে খুন হওয়া কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের নতুন চন্দ্রকেও চিনতেন-জানতেন।

আনিসুজ্জামান স্যারের সাক্ষ্যে নতুন চন্দ্রের বিরুদ্ধে পাকিস্তানপন্থি সাকা পরিবারের ক্রোধের কারণটিও জানা গেল।   বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তখন নানা সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন নতুন চন্দ্র। পাকিস্তানিদের প্রতিরোধে যে সব বোমা-ককটেল তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বানানো হচ্ছিল, সে সবের বোতলও তখন তার কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় থেকে সরবরাহ করা হতো। পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামে অভিযান চালানোর পর চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেরই পরিবার কুণ্ডেশ্বরীর ক্যাম্পাসের ভিতরে আশ্রয় নেন। সে কারণে নতুন চন্দ্রকে হত্যার মাধ্যমে এসবের ঝাল মিটিয়েছেন তৎকালীন ‘পাকিস্তানি মেজর’ বলে পরিচিত আজকের বিএনপি নেতা, খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা)চৌধুরী! এবার ট্রাইব্যুনালে সশরীরে সাক্ষীর বেশে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের উপস্থিতি দেখে প্রথমে বুঝতে পারি কেন সাকা চৌধুরী এভাবে উতালা, কেন তার এতো লাফঝাঁপ! (আনিসুজ্জামানের সাক্ষ্যের খবরটি প্রথম দিতে পারায় বাংলানিউজের জাকিয়া আহমেদকে অভিনন্দন)।

দেশের বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদের সাক্ষ্যে এমন এক ব্যক্তিত্বের নাম পাওয়া গেছে যিনি এ মামলার সম্ভাব্য আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারেন। ইনি সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন। একাত্তরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে তখন তাকে গুডহিলসের বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেন সাকা চৌধুরী। এমন আরেকজন আছেন আমাদের চেনাজানা সাংবাদিক রয়টার্সের ঢাকা ব্যুরোতে কর্মরত নিজামউদ্দিন আহমেদ। তাকেও তখন  গুডহিলসের বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে নির্যাতন করেছিলেন আজকের বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন, সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদকে এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কীনা জানি না। ট্রাইব্যুন্যাল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের ডেকে তাদের কথা শুনতে পারেন। তাতে এ বিচার কার্যক্রমের শক্তি বাড়বে। নতুন চন্দ্র সিং’এর ছেলেতো আছেনই। রাউজানের ঊনসত্তুরপাড়া গ্রামে সাকা বাহিনীর সৃষ্ট বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে থাকা শহীদদের বিচারপ্রার্থী স্বজনরাও আছেন।
 
এবার মামলায় আসামি আর তার পক্ষের আইনজীবীদের আচরণ নিয়েও কিছু কথা বলার আছে। যাকে এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালও তার আইনের লংঘন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। একাত্তরে বাংলাদেশ আর মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধকারী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার আগে থেকেই ক্রমাগত শাসিয়ে আসছিলেন, তার গায়ে হাত দেয়ার সাহস কারও নেই! তাকে ধরলে দেশ অচল আর কারবালা হয়ে যাবে; এমনকি চট্টগ্রাম ভারত হয়ে যাবে-- এমন আষাঢ়ে গল্পও কম শোনাননি তিনি! তাকে ধরা হয়েছে আজ অনেক দিন হয়ে গেল, দেশ ঠিকই চলছে, চট্টগ্রামও ভারতের অংশ হয়ে যায়নি, তাছাড়া এরই মধ্যে সাকার নেত্রী খালেদা জিয়াও চট্টগ্রামে গিয়ে ভাষণ দিয়ে এসেছেন! এরপর থেকে কথায় কথায় ট্রাইবুন্যালকে যা খুশি শাসানো, সর্বশেষ ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে ‘ডোন্ট শো ইউর রেড আইজ’ (‘‘আমাকে চোখ রাঙাবেন না’’) জাতীয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করেছেন! সাকা তথা দেশের কুখ্যাত রাজাকার, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীর স্ত্রী-সন্তানরা নানান ইস্যুতে নানান নাটক করেন, ঘনঘন আমাদের নানান জ্ঞান দেবার, মানবাধিকার শেখানোর চেষ্টা করেন! তাদের পরিবারের কষ্ট বুঝি, কিন্তু আমরা যে চল্লিশ বছর ধরে মানবাধিকার আর বিচারবঞ্চিত! এসব নিয়ে তো কারও কোনো মাথাব্যথা নেই!

সর্বশেষ সাকা’র আইনজীবী ফখরুল ইসলাম দেশের সেরা একজন শিক্ষককে কোর্টে দাঁড়িয়ে ‘মিথ্যুক’ বলার বেয়াদবি আর ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন! ট্রাইবুন্যালের আপত্তি ও বারণ সত্ত্বেও কোর্ট থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছেও এই অশিষ্ট আইনজীবী করেছেন একই রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য! আবার ট্রাইব্যুনাল তাকে যখন এ ব্যাপারে ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন তিনি নির্বিকার চিত্তে বলেছেন, ‘‘আমি আদালতে যে কথা বলেছি, বাইরেও সে কথা বলেছি!’’

আইন পেশায় আসামি (ডিফেন্সের) পক্ষে থাকার বিধান আছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলকে বাঁচাতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইন পেশাতো ভদ্রজনেরই পেশা। ভদ্রতা-ভব্যতা এ পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তা কোড অব কন্ডাক্টেরই অংশ। এক্ষেত্রে সবার আগে আইন-আদালতের সম্মান। কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের শুরু থেকে আমরা অবাক হয়ে দেখছি, আসামি পক্ষের কোনো কোনো আইনজীবী কেন জানি আসামিদের মতো ট্রাইব্যুনাল, এর বিচারকবৃন্দ এবং সাক্ষী--কারোর প্রতি ন্যূনতম সম্মানটুকু দেখাতে পর্যন্ত নারাজ! সাকা চৌধুরীর আইনজীবী তাই ট্রাইবুন্যালের বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়েও ধৃষ্টতা ও অভব্যতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বলতে পেরেছেন, ‘আমি আদালতে যে কথা বলেছি, বাইরেও সে কথাই বলেছি’! ভাবখানা এই যে, ‘কুচ পরোয়া নেহি! পারলে কিছু করেন!’ এটা কী বারের শিক্ষা? এসব আইনজীবীকে যারা সনদ, আইন ব্যবসার লাইসেন্স দিয়েছে সেই বার কাউন্সিলকে এর জবাব দিতে হবে। দেশের সেরা সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফখরুল ইসলামের ‘বেয়াদবি’কে আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছেন ট্রাইবুন্যাল। আগামী ২৭ মে ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হয়ে তাকে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে। নইলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। আমরা আশা করবো ট্রাইব্যুনাল এ ব্যাপারে নিজস্ব মর্যাদা, দেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষক, জ্ঞানতাপস সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মর্যাদা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। বেয়াদবকে শাস্তি দেবেন। তা না হলে কিন্তু অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মাপের দ্বিতীয় কেউ কিন্তু এ ট্রাইবুন্যালে গিয়ে সাক্ষ্য দেবার আগ্রহ হারাবেন।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে মঙ্গলবার ট্রাইবুন্যালে জেরা করেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক। এই জেরার বৃত্তান্ত পড়ে যে কারও ধারণা হবে এই সাক্ষী বুঝি ভারতীয় কেউ বা ভারত থেকে এসেছেন, আর আইনজীবী এসেছেন পাকিস্তান থেকে! স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বরাবরই যে, ভারতীয় ‘চক্রান্ত’ অথবা ‘দয়ার দান’ হিসাবে দেখাতে অভ্যস্ত, এই আইনজীবীর জেরার ভাষাতেও সে ধারা যেন সুস্পষ্ট! সেই যে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধিকারের দীর্ঘ সংগ্রাম, একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা শুরুর পর দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, শিল্পী-সাংবাদিক-শিক্ষক-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে প্রায় এককোটি মানুষ শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিলো ভারতে, গঠিত হলো প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার, নয় মাস ধরে চললো রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, আর গোলাম আজম-নিজামী-ফকা-সাকাদের ইন্ধনে ঘটে গেল নারকীয় গণহত্যা, এই পাকিস্তানপন্থিদের কাছে এসব তুচ্ছ ব্যাপার হয়েই রয়েছে আজো।
 
আমাদের এ অঞ্চলের সিনিয়রদের অনেকেরই জন্ম অবিভক্ত ভারতে অথবা আজকের ভারতীয় সীমায়। তেমন আনিসুজ্জামানের জন্মও কলকাতায়। যেমন খালেদা জিয়ার জন্মও জলপাইগুঁড়িতে। দ্বিজাতিতত্ত্বের সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর এপারের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকে যেমন ভারত চলে যান, ওপারের মুসলমানদের অনেকে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু শুরু থেকে এ কোর্টে দেখে আসছি সাক্ষীদের ভারতীয় গন্ধ খুঁজে বের করার চেষ্টা অনর্গল! কার জন্ম ভারতে হয়েছে কীনা, কেউ এখনও ভারতে যায় কীনা! যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এরা সব ভারতপন্থি(!); এদের চোখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা মানেই ভারতপন্থি! কারণ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে ভারতের সমর্থনে! উনারা পাকিস্তানের সমর্থনে ছিলেন। এখন বাংলাদেশ হয়ে গেছে বলে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের মতো থেকে গেছেন এখানে! বাহ! ট্রাইব্যুনাল রিপোর্টিং এর গুণে দেশের নতুন প্রজন্মও দেশ-মুক্তিযুদ্ধ-ভূগোল ইত্যাদি সম্পর্কে উনাদের জ্ঞানের বহর সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাচ্ছে!

বাংলা সাহিত্য নিয়ে বেশ ক’টি অসামান্য গবেষণাগ্রন্থ আছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের। বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ দেশের ও দেশের বাইরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক। আর একাত্তরের বাংলাদেশবিরোধী চিহ্নিত চরিত্র সাকা চৌধুরীর আইনজীবী জেরায় তাকে প্রশ্ন করছেন, বাংলাদেশে গুণী ব্যক্তিদের তিনটি ভাগ আছে-ইসলামিক স্কলার, ওয়েস্টার্ন এডুকেটেড এবং সেক্যুলার লিবারেল। সাক্ষী এর কোন ভাগে পড়েন? অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জবাবে বলেছেন, ‘আমি বিদেশে গবেষণা করেছি, দেশেও বেশিরভাগ লেখাপড়া করেছি। তবে আদর্শগতভাবে নিজেকে সেক্যুলার লিবারেল মনে করি’।

জেরায় প্রশ্নের ধরণটি খেয়াল করুন। বাংলাদেশে গুণী ব্যক্তিদের প্রথম ভাগেই কী ইসলামিক স্কলাররা পড়েন? আসামি সাকা চৌধুরী, তার আইনজীবীও কী ইসলামিক স্কলার? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পঁচিশ বছর বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সেই তাকে জেরায় বারবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল, ভারত থেকে তিনি কী কী ডিগ্রি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন! অতএব তার মাপের সাক্ষী কোর্টে যত আসবেন, আমরা কিন্তু ততই ইনাদের (আসামিপক্ষের) অনেকের জ্ঞানের বহর সম্পর্কে ধারণা পাবো! সেজন্য সবার আগে দরকার একটি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। তার মাপের একজন নিপাট ভদ্রলোককে ‘মিথ্যুক’ বলে গালি  যিনি দিয়েছেন তার বেয়াদবির বিচার করতে হবে, শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দেশের এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বরেণ্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তিনি যেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মতো কোনো নৃশংস হামলার শিকার না হন। ঘাতককূল এখন মরিয়া হয়ে যে কোন অপচেষ্টা চালাতে পারে। প্লিজ, সতর্ক ব্যবস্থা নিন আগেভাগে।

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় : ১৮৫২ ঘণ্টা, ১৬ মে, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।