ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ ও পুত্রের প্রশ্নের জবাব

আবদুল হামিদ মাহবুব, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১২
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ ও পুত্রের প্রশ্নের জবাব

আমি হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত নই। তবে সেই যুবক বয়সে হুমায়ূন আহমেদের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘নন্দিত নরকে’ পড়েছিলাম।

পরে আমার শিশুপুত্রের জন্য তাঁর লেখা ছোটদের সকল বই-ই আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাঁর শিশুসাহিত্যও আমি পড়েছি। বই হিসাবে সর্বশেষ পড়েছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’। তারপর আমাকে আমার পুত্রের (যে এবার এসএসসি উত্তীর্ণ হয়েছে) অনুরোধে পড়তে হয়েছে ক’দিন আগে একটি পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘দেয়াল’ উপন্যাসের খণ্ডাংশ। আমার পুত্র আগেই এটুকু পড়ে নিয়েছিলো। কারণ সে যে হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত পাঠক! তাঁর সংগ্রহে হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সকল বই-ই আছে। সে কখনো হিমুর মতো হতে চায়। কখনো মিসির আলীর মতো জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব ধরে। হুমায়ূন আহমেদের গল্প উপন্যাসের চরিত্রের মতো যার তার সামনে সে ইচ্ছেমতো মন্তব্য কিংবা মতামত দিয়ে বসে। তার এহেন কর্মকাণ্ডে আমি ও তার মা প্রায়শই বিব্রত হই।

নাছোড়বান্দা এই ছেলেটি আমাকে ‘দেয়াল’ পড়িয়েও নিস্তার দিলো না। দেয়ালের যতোটুকু প্রকাশিত হয়েছে, সে সম্পর্কে আমাকে তার একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। পুত্রের প্রশ্ন এবং আমার জবাব এখানে আমি তুলে ধরলাম। এ কারণে তুলে ধরলাম যে, এখন এ বিষয়টি নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে।

প্রশ্ন: তিনি যা লিখেছেন সব কি সত্য?
উত্তর: সত্য-মিথ্যা সবই আছে।
প্রশ্ন: ইতিহাসে মিথ্যা থাকবে কেনো?
উত্তর: তিনিতো ইতিহাস লিখেননি, ইতিহাস আশ্রয় করে উপন্যাস লিখেছেন।
প্রশ্ন: তা হলে কি এখানে অন্য উপন্যাসের মতো কল্পিত চরিত্র ঢুকিয়েছেন?
উত্তর: ইতিহাসের সাথে যুক্তদের কার্যকলাপে কল্পনা মিশিয়ে তখন যে চরিত্র যা করেনি তিনি সেটাও করিয়েছেন।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু কি একনায়কের মতো দেশ শাসন করেছেন?
উত্তর: না, বঙ্গবন্ধু একনায়ক ছিলেন না। তবে তিনি সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য একদলীয ব্যবস্থার বাকশাল গঠন করেছিলেন।
প্রশ্ন: ফারুক-মোস্তাক-রশীদের কথা যেভাবে উপন্যাসে এসেছে, বাস্তবেও কি তারা এ রকমই করেছিলো?
উত্তর: বাস্তবের সাথে লেখকের কল্পনার মিশ্রণ আছে।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে কি লোকজন আনন্দ করেছিলো?
উত্তর: এমন কিছুতো জানি না। তবে আমাদের পাড়ায় জাসদের নেতারা থাকতেন। তারা আনন্দিত হয়েছিলেন দেখেছি। আমাদের এক আত্মীয় যিনি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তাকেও উল্লাস প্রকাশ করে তোমার দাদাকে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার খবর দিতে দেখেছি।
প্রশ্ন: রক্ষীবাহিনী নিয়ে যা লেখা হয়েছে, এটা কতটুকু সত্য?
উত্তর: এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই। তবে এটা আমার স্মরণ আছে, রাস্তায় যখন রক্ষীবাহিনীর গাড়ি দেখতাম তখন রাস্তার পাশে নেমে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
প্রশ্ন: কেন?
উত্তর: ভয়ে। তারা যারে-তারে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতো।
প্রশ্ন: এখন যে হাইকোর্ট হুমায়ূন আহমেদকে বইটি ঠিক করে লিখতে বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদ কি সেটা করবেন?
উত্তর: হয়ত করবেন, হয়ত করবেন না।
প্রশ্ন: না করলে কি হবে?
উত্তর: এই বই প্রকাশ হবে না।

আমার ছেলে আর কোনো প্রশ্ন না করে বললো; ‘হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাস নিয়ে নাটক বানাতে গিয়ে শেষে নাটক বানানো বন্ধ করে বলেছিলেন বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। দেখো বাবা, হুমায়ূন আহমেদ এবারও বলবেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের উপন্যাস পড়ার জন্য মানুষ প্রস্তুত নয়।

আমি বললাম; হয়ত বলতে পারেন। আবার কিছু না বলেও চুপ করে থাকতে পারেন।

লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক
[email protected]

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।