ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বৃক্ষ নিধন ও কাঠের আসবাবের ব্যবহার

ওয়াসেত সাহিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৩
বৃক্ষ নিধন ও কাঠের আসবাবের ব্যবহার

ঢাকা: একটি দেশের প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য মোট ভূখণ্ডের ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১০% এর নীচে ।

এদেশে বৃক্ষ নিধন চলে নির্বিচারে । এসব গাছ বিদেশে রপ্তানি হয় না । দেশের ভেতরেই ব্যবহৃত হয়। ঘর বাড়ি, আসবাবপত্র, জলযান তৈ্রিতে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠের উপযোগিতা অনস্বীকার্য । এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।

কিন্তু দৃশ্যপট অন্যান্য অনেক দেশেই ভিন্ন । বিশেষত, উন্নত দেশগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ বনভূমি থাকার পরও তারা কাঠের ব্যবহার অনেক কমিয়ে দিয়েছে । তারা কৃত্রিম কাঠ, স্টিল ইত্যাদির মাধ্যমে সুদৃশ্য আসবাব তৈরি করছে । এতে সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের কমতি হচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজনে খুবই সীমিত সংখ্যক গাছ তারা কেটে থাকে । পরিবেশ সুরক্ষার দায়বদ্ধতার কারণেই তারা মূলত কাঠের আসবাবের ব্যবহার হ্রাস করেছে ।

গাছ পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা, বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধতা রক্ষা, পাখির নিরাপদ আবাসস্থল, মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ, ঝড়ের সময় ধ্বংসাত্মক বাতাসের গতিকে প্রশমিত করা, এসব সহায়তা আমরা বৃক্ষ থেকে পেয়ে থাকি । প্রয়োজনের তুলনায় বৃক্ষ যত কমবে, এসব সুবিধাদিও তত কমে আসবে । এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে থাকবে, এবং বিপর্যয়কালীন ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে ।

আমাদের দেশে খুবই কম বনভূমি থাকার পরও কাঠের ব্যবহার ব্যাপক । রাস্তার পাশে যত ফার্নিচারের দোকান আছে সবগুলোতেই কাঠের ফার্নিচার । বাসা বাড়িতে কাঠের আসবাবপত্র । উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনের ঘরেও কাঠের আসবাব শোভা পাচ্ছে । কাঠের আসবাব ছাড়া যেন আমাদের চলেই না । এটি প্রয়োজন নয়, কৌলীন্যবোধ। দামি কাঠের আসবাবপত্র ঘরে না থাকলে যেন মানসন্মান বজায় থাকে না । দু’এক দশক ধরে এদেশে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণী মাঝারি থেকে ছোট আকারের    অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেছে । এ সব  অ্যাপার্টমেন্টে ঝকঝকে কাঠের ফার্নিচারের সমাহার । দেদারসে কাটা গাছের গুঁড়ি শহরে ঢুকছে আর সুদৃশ্য কাঠের আসবাব তৈরি হচ্ছে । ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির গাছ কাটা হচ্ছে, গভীর বনাঞ্চল থেকে চুরি হচ্ছে গাছ । এর কারণ আমাদের সমাজে কাঠের বিশাল চাহিদা ।

তবে কৃত্রিম কাঠ, স্টিল, ফোম ইত্যাদির তৈরি আসবাবের ব্যবহার একেবারেই নেই, তা বলা যাবে না । বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এসব আসবাব তৈরি ও বিপণন করছে । পান্থপথে এবং ঢাকার আরো দু’ একটি এলাকার দোকানে এসব আসবাবের দেখা মেলে । তবে এসব আসবাব এখনও বাসা বাড়িতে তেমন স্থান করে নিতে পারেনি । বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । এগুলোর ডিজাইন খুবই সুন্দর, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের । অফিস আদালতে এখন অটবি ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্রগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । এর ফলে কাঠের ব্যবহার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে সন্দেহ নেই । এর বিস্তার বাসা বাড়ি ও সামাজিক পর্যায়ে পৌঁছালেই দৃশ্যমান ফল লাভ হতে পারে ।

পরিবেশ সুরক্ষায় কাঠের পরিবর্তে কৃ্ত্রিম কাঠ ও স্টিলের আসবাব ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে । এর জন্য ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা যেতে পারে। এটি যথেষ্ট ফলপ্রসূ হবে আশা করা যায় ।

পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা সাতশ’ কোটি । অতীতের তুলনায় এটি অনেক বেশি । তবে থেমে নেই, বেড়ে চলেছে । বিজ্ঞানের অনেক অগ্রগতি হয়েছে । মানুষের আয়েশি জীবনে প্রয়োজনের ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে । ব্যাপক শিল্পায়ন, যান্ত্রিক যাতায়াত ব্যবস্থার প্রসার জীবনের নানা প্রয়োজনে যন্ত্রের বর্ধিত ব্যবহারের কারণে প্রকৃতির উপর বিরূপ চাপ বেড়েছে । কলকারখানার ধোঁয়া ক্ষতিকর গ্যাস উদগিরণ করছে । নিঃসরণ করছে বিপুল পরিমাণে বিষাক্ত তরল পদার্থ। ফলে তাপ তৈরি হচ্ছে, বায়ূমণ্ডলে ক্ষতিকর গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসবই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। তবে উন্নত দেশগুলোতে শিল্প কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে এসবের তেমন বালাই নেই । আধুনিক জীবনে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠ ও এর সংলগ্ন বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । ফলে আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে । বাড়িয়ে দিচ্ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ।

এ অবস্থা প্রতিরোধে আমাদের প্রাকৃতিক ও সব ধরনের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া আবশ্যক । পরিবেশের জন্য বৃক্ষের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। তাই বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করে এর বিকল্প ব্যবহারই হচ্ছে যথেচ্ছ বৃক্ষ নিধন রোধের উপায়। এর জন্য শুধু প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন । বৃক্ষ বাঁচলে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে । এতে আমরাও স্বাস্থ্যকর জীবন ধারণ করতে পারবো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও রেখে যেতে পারবো বাসযোগ্য একটি আবাসভূমি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।