ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দয়া করে এবার থামুন

ড. জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৩
দয়া করে এবার থামুন

বিরোধী ও সরকারি দল এবার দয়া করে থামুন। দেশের কেমন উন্নতি আপনারা চান তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।

দেশের মানুষের পক্ষে আপনাদের অবস্থান কেমন তাও আমাদের কাছে সুস্পষ্ট। এই যে প্রতিদিন আপনাদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ছুঁড়ে দেয়া পেট্রোল বোমা আর ককটেলের আঘাতে রাজনীতির সঙ্গে বিন্দুমাত্র সংযোগহীন নিরীহ জনগণ নিদারুন যন্ত্রনায় মৃত্যুবরণ করছেন, এজন্য আপনারা দু’নেত্রীই সমান দায়ী।

জনগণের জন্য রাজনীতি করেন বলে দু’জনেই বেশ বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। তো সেই জনগণের কাতারে কি নাহিদ, রবিন, মোজাম্মেল, মাহবুব, শফিকুলেরা পড়ে না? আপনারা কি বার্ন ইউনিটের জ্বলন্ত শরীরগুলোকে জনগণ ভাবেন না? ওদের পুড়ে যাওয়া শরীরের দুঃসহ কষ্টের আর্তনাদ কি আপনাদের কানে যায় না? আপনারা কি পত্রিকা পড়া, টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন? ওদের যন্ত্রণাক্লিষ্ট শরীর, মমির মত সারা শরীরে বাঁধা ব্যান্ডেজ কি আপনাদের নজরে পড়েনি?

তাদের মৃত্যু কি আপনাদের বিবেককে একটুও নাড়িয়ে দেয় না? নাকি বিবেক বলে আপনাদের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই?

 আমাদের দেশের আজকের এই দুর্গতির জন্য দায়ী ক্ষমতার প্রতি আপনাদের সীমাহীন মোহ। দু`দলের দু’জন তো পালাক্রমে বহুবছর ক্ষমতায় রইলেন।

ক্ষমতায় থেকে কি শিখলেন, কি করলেন জনগণের জন্য! আমজনতাকে জিম্মি করে জীবন নিয়ে আর কতো রাজনীতি করবেন!

আপনারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিন। যেভাবে ইচ্ছে সমঝোতা করে নিন। কিন্তু আমাদের বাঁচতে দিন।

আমাদের মত দুর্ভাগা জনগণ আর কে বা আছে। পেটের দায়ে ঘরে থাকা দায়, ঘর থেকে বের হলে বেঁচে থাকা দায়। সত্যি যদি উপায় থাকত, তবে আমরা ঘর হতে কেউ বের হতাম না। পরিবার পরিজনের সঙ্গে  ঘরে বসে বসে রসিয়ে রসিয়ে আপনাদের টক শো নামক কমেডি দেখতাম আর নির্মল আনন্দ উপভোগ করতাম।

কিন্তু তাতে তো আবার আপনাদের অবরোধ সফল হত না। আপনাদের দরকার জীবন, রক্ত নিয়ে রাজনীতি।   নিরীহ জনগণের বুক ফেটে উঠে আসা আর্তনাদ আপনারা চাপা দেন রাজনীতির চতুর কৌশলে। ডেকোরেশন করে নেন ক্ষমতার মসনদ।

আর সরকারি দল! প্রধান বিরোধীদলকে বেমালুম অস্বীকার করে যখন নির্বাচনের পথে অবিচল হাঁটতে থাকে, তখন প্রশ্ন জাগে-এরাই কি জনগণের জান-মালের হেফাজতের শপথ নেয়া দল? কোথায় তাদের চৌকস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী? কেন এখন পর্যন্ত পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে দেয়া একজন ব্যক্তিও গ্রেফতার হলো না? গাড়ির পর গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবার চোখের সামনে, কেন কোনো প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না?

নির্বাচন তফসিল, মনোনয়ন নিয়ে তাদের মধ্যে যে উৎসব উৎসব ভাব দেখা যাচ্ছে তাতে তো একটি বারের জন্য মনে হচ্ছে না যে, কেউ জনগণের কথা ভাবছে। সরকারি দল এমন ভাবে চলছে, দেশে যেন কিচ্ছুটি হয়নি। সব স্বাভাবিক। কোনমতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলেই সব নিশ্চিন্ত।

দফারফা শুধু জনগণের। খালেদা জিয়া ও তার অনুসারীদের লাগাতার অসহযোগিতার মুখে হয়তো আরো অস্থিরতা। ক্ষমতা নিয়ে কামড়াকামড়ির খেলায় আরো ক’টা প্রাণহানি। আরো অনিশ্চয়তা। কোনমতে নির্বাচন করলেই সব সমস্যার সমাধান বলে জনগণকে বোকা বানাতে চাইছেন কেনো?

ক্ষমতায় বসার কৌশলে এখনকার সরকারের কাণ্ডারি একদিন যে জামায়াতকে নিয়ে হাসিমুখে এক মঞ্চে বসে ফটোসেশন করেছিলেন, তারাই আজ অন্য নেত্রীর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে তাদেরই ঘাড়ে সিন্দাবাদের দৈত্যের মত চেপে বসে তাণ্ডব চালাচ্ছে।

যে স্বৈরাচারকে হটিয়ে আপনারা দু’জন গণতন্ত্রের মন্ত্র জপে যাচ্ছেন, সেই আপনারাই আজ স্বৈরাচারের শরীরে গণতন্ত্রের আলপনা আঁকছেন। হাতে তুলে দিচ্ছেন গণতন্ত্রের পতাকা।  

এই অগ্নিদগ্ধ লাশ, এই আর্ত চিৎকার, এই জ্বালাও-পোড়াও-এসবের প্রত্যক্ষ দায় বিএনপির। অবরোধ সফল করে তোলার নেশায় জনমনে আতংক তৈরি করতে এ সব তারা করাচ্ছে না এ দাবি কি কেউ মানবে? যতই ফখরুল, রিজভি সাহেবেরা বলুক না কেন যে, সরকারি দল তাদের বিতর্কিত করার জন্য এসব করাছে, আমরা জনগণ তা বিশ্বাস করিনা। কারণ অবরোধ আপনারাই দিয়েছেন, এর ফলে সৃষ্ট সব সহিংসতার দায় আপনাদের।
 
তবে এই সহিংস আন্দোলনের পরোক্ষ দায় অবশ্যই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তারা যদি এভাবে একলা নির্বাচনের গোঁ ধরে না থাকত, তবে বিরোধীদল এভাবে এমন টানা অবরোধের পথে যেতে পারতো না। আর অবরোধ না দিলে এভাবে নাহিদ, রবিনের মত তাজা প্রাণ পুড়ে কয়লা হয়ে যেত না।

অনেক তো হলো। অনেক কিছুই তো জনগণের জন্য করলেন! এখন থামুন। আমরা আর আপনাদের রাজনীতির শিকার হতে চাইনা। আমাদের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতির কূটচাল এবার বন্ধ করুন। দেয়ালে পোড়া শরীর ঠেকে গেছে। আপনাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের পোড়া জনগণের সামনে কোনো পথই যে আর খোলা নেই। তাই আবারও বলছি, দয়া করে এবার থামুন

 

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।