১৮ দলীয় জোটের আহবানে সারাদেশে অবরোধ চলছে। মফস্বল শহরের রাস্তাটি বেশ ফাঁকা।
এসময় অবরোধ সমর্থনে একটি মিছিল এলো। মিছিলকারীদের হাতে লাঠি। এগিয়ে আসছে মিছিল। হঠাৎ মিছিলটি থামে। মিছিল থেকে বেরিয়ে কয়েকজন রাস্তার মাঝখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কয়েকটা ককটেল ফাটায়। ভয়ে চুপসে যায় আদৃতা। মায়ের বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে রাখে নিজেকে।
খুব মন খারাপ নিয়ে আমার ভীষণ মনে পড়ছে, শিশুবেলার কথা। রাজনীতি সম্পৃক্ততা ছিল না তখন। সবেমাত্র রাজনীতিকে চেনা এবং জেনে ওঠার পালা। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখছি একটি রাজনৈতিক মিছিল বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাস্তায়। মিছিলটি দেখার জন্য। বড়দের সঙ্গে কখনো-সখনো মিছিলের স্লোগানে কণ্ঠ মিলাচ্ছি। হাত নেড়ে, তালি দিয়ে মিছিলকারীদের স্বাগত জানাচ্ছি। তারাও উৎসাহিত হচ্ছে। দ্বিগুণ উদ্দীপনায় মিছিলের আওয়াজ মুহুর্মূহু ছড়িয়ে যাচ্ছে।
মিছিলটি চলে যাওয়ার পরও তার রেশ থেকেছে অনেকক্ষণ। মাঝে মাঝে আমাদের মনের ভেতর থেকে মিছিলের স্লোগানগুলো গুণগুণ হয়ে উঠছে। প্রাণস্পর্শী ছিল, পরিচ্ছন্ন ছিল সেসব মিছিল এবং মিছিলের স্লোগান। আমাদের বাবা-মারাও তখন মিছিল দেখার জন্য আমাদের উদ্বুদ্ধ করতো। একসময় নিজেই রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে পড়ি। প্রথম মিছিলে অংশ নিই আমি সপ্তম শ্রেণিতে থাকাবস্থায়, এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের সহপাঠী বন্ধু স্মরণ নিহত হয়। স্মরণে’র হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মিছিল করি। পরবর্তীতে কলেজ পড়াবস্থা থেকে মিছিলে অংশ নিতে থাকি।
সম্প্র্রতি জাতিসংঘের অঙ্গ-সংগঠন ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে শিশুদের যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ থেকে নিরাপদে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বেশকিছু শিশুর হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এমন এক সময় উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো যখন পুরো দেশজুড়ে রাজনৈতিক সংঘাত চলছে।
ওদেরকে আমরা ‘টোকাই’ বলি, ‘পথশিশু’ বলি। ক্রিকেটবিশ্বের বড় বড় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যখন বাংলাদেশের টাইগাররা জয়ী হয়, তখন তারাও লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে, উৎসবে মুখরিত করছে। ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী’র একটি কার্টুনচিত্র প্রকাশিত হয়। ‘টোকাই’- নামে এ চিত্রটিতে তিনি তাদের মুখে তুলে দিয়েছেন চট-জলদি মন্তব্য, অপ্রিয় সত্য, অথবা তীব্র আর গতানুগতিকতার বাইরের ভিন্ন পর্যবেক্ষণ ক্রিয়া। রণবীর এ ‘টোকাই’ চিত্রটিতে পথশিশুদের খ্যাতি ছড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সেই টোকাই বা পথশিশুদের একটা বড় অংশের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। ধীরে ধীরে এটি ভয়াবহ আকারে ধারণ করছে।
যখন এসব শিশুর লেখাপড়া এবং খেলাধুলা করার কথা তখন সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে দেশে চরম সহিংসতায় এদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের হাতে বই-খাতা, খেলার সামগ্রী তুলে না দিয়ে, দেওয়া হচ্ছে ককটেল এবং পেট্রোল বোমা। সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত শিশুদের সনাক্ত করা আইন প্রয়োগকারীদের পক্ষে সম্ভব হয় না, সেজন্যই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা-কর্মীদের চেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করতে শিশুরা বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সহিংসতায় ব্যাপকহারে শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে। জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়কে নেমে আসে শিশু। তারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে, রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। শিশু বলে এসময় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যেতে পারেনি।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে গিয়ে গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় আক্রান্ত হয়েছে পথচারী ও নিরপরাধ ১৩ শিশু। আক্রান্তদের মাত্রা প্রতিদিন বাড়ছে। এরমধ্যে ককটেল নিয়ে খেলতে গিয়ে আহত হয়েছে বেশ ক’টি শিশু। ৩ জন শিশু মারাও গেছে।
জাতীয় শিশু নীতির ৬,৭,৪ এ বলা আছে, ‘শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর পূর্বক জড়িত করা যাবে না। ’ বাংলাদেশ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করা একটি দেশ। কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। চলতি বছরের ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে দিক-নির্দেশনাহীন অবস্থায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসার ছোট ছোট শিশুকে রেখে পালিয়ে যায়, যাতে তারা প্রচণ্ড ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ শিশুই জানেনা তারা কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে এসেছে। আটক হওয়া শিশুরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের উত্তরে বলেছে, তারা ১৩ দফার কিছু জানে না-বোঝে না। হুজুররা বলেছেন তাই তারা এসেছে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পিকেটিং করার সময় আটক হওয়া কিছু শিশুও জানিয়েছে, তাদেরকে বড়রা বিভ্রান্ত করে এসব কাজে ব্যবহার করেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, শিশুদের বিভ্রান্ত করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইন অনুযায়ী শিশুদের সহিংস কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো শিশুদের কেবল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই সম্পৃক্ত করছে না, তাদের দিয়ে সহিংস ঘটনাও ঘটাচ্ছে। আইনানুযায়ী এটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
যেসব পথশিশু টাকার বিনিময়ে ককটেল নিক্ষেপ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, নিজেদের অজান্তেই তারা অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে। মানসিকভাবেও তারা মানবিকবোধহীন হয়ে যাচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক কাজেই শিশুদের অপব্যবহার করা নয়, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ অনেক দ্রব্য পরিবহনেও তাদের ব্যবহার করা আমাদের দেশে ব্যাধির মতো ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অপরাধের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ে, তাদের অনেক সময় ধরা সম্ভব হয় না। ‘টোকাই’ নামে খ্যাত শিশুদের দিয়ে হরতাল-মিছিল চলাকালে ককটেল মারা কিংবা গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোর অন্তরালে থাকা ব্যক্তিরা অজানাই থেকে যাচ্ছে।
এসব অজানা মানুষগুলোকে পুলিশ ইচ্ছে করলে ধরে ফেলতে পারে, কিন্তু কাউকে ধরার কথা শুননি। আর এদিকে এতোসব নৃশংসতার ঘটনায় সরকার বিরোধীদলকে দায়ী করছে, বিরোধীদল দায়ী করে চলেছে সরকারকে। মাঝে থেকে ফায়দা লুটে নিচ্ছে অন্য কোন শক্তি।
দুই.
সময়টা ১৯৭১ সাল। শিশুটির নাম শহীদুল ইসলাম, লালু। বয়স ১২ বছর। ছোটবেলা থেকে ডানপিটে ও দুরন্ত প্রকৃতির সে। একদিন টাঙ্গাইলের মেঠোপথে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে তার চোখে পড়ে কাদেরিয়া বাহিনীকে। ‘আমারে আপনাগো লগে লন’আবদার জুড়ে মুক্তিবাহিনীর ওই গ্রুপটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে।
মুক্তিযোদ্ধারা ভাবনায় পড়ে- এতো ছোটো ছেলে! কোনো উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে সে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ফরমায়েশ খাটা শুরু করে। সেখান থেকে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতের মেঘালয়ের তুরাতে ট্রেনিং নেয়। ট্রেনিং চলাকালে শহীদুল ইসলামের নামের সাথে লালু নামটি জুড়ে দেন ব্রিগেডিয়ার সামসিং। তখন থেকে লালু নামে পরিচিত শহীদুল ইসলাম।
২৫ দিনের ট্রেনিং শেষে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের কেরামজানি-তে ফিরে আসে লালু। তকে গোপালপুর থানায় অবস্থিত পাকিস্তানী বাহিনীর বাংকার গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। হাফপ্যান্ট পরে বিকেল বেলায় তিনটি গ্রেনেড নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে লালূ। থানার গেটের সামনের বটগাছের নিচে যেতেই তার গ্রামের এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তখন রাজাকারদের রাস্তায় পাহারাদারয় ছিলেন।
‘তুই আমাদের ক্যাম্পে থেকে যা, ওই বাংকারে পাঞ্জাবি সেনাদের চা-টা খাওয়াবি’-সুযোগ হাতছাড়া না করে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় লালু। গ্রেনেডগুলো থানার পেছনের পুকুর পাড়ে রেখে ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে। একসময় সুযোগ বুঝে সবার অগোচরে থানার ভেতরের ১টি পরিত্যক্ত জায়গায় গ্রেনেড ৩টি রেখে আসে। তারপর চা-পানি খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে তাকায় চারদিক, কে কোথায় আছে লালু দেখে নেয়। ৩টি বাংকার টার্গেট করে নেয়। তিন বাংকারগুলোতে ৫ জন, ৪ জন ও ৩ জন করে পাক সেনা রয়েছে।
লালু লুকিয়ে রাখা গ্রেনেডগুলো আনতে গিয়ে সেখানে কিছুটা বিপদের মুখোমুকি হয়। গ্রেনেডের উপর শুয়ে আছে এক মস্তবড় সাপ। সাপটি চলে গেলে সেফটিপিন খুলে প্রথম গ্রেনেডটি এক বাংকারে ছুঁড়ে মারে লালু। ভীত ও হতভম্ব পাকিস্তানীরা আন্দাজে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। শুয়ে পড়ে লালু। দ্বিতীয় গ্রেনেড ছোঁড়ে। কিন্তু এটা ফাঁটে না। এখান থেকে আর বেরুনো যাবে না-এই ভয় পেয়ে বসে তাকে। তারপরও তৃতীয় গ্রেনেডটি সশব্দে ফাটে আরেকটি বাংকারে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও এগিয়ে এসেছে। গোলাগুলির এই পর্যায়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা লালুর হাতে একটি অস্ত্র ধরিয়ে দেয়। লালু অস্ত্র হাতে নিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ (একদম সামনাসামনি) থেকে গুলি শুরু করে।
এ ঘটনায় কিছু পাকিস্তানি পালায়, কিছু ধরা পড়ে, মৃত্যু হয় অনেকের। হতাহতের মধ্যে দিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয় গোপালপুর থানা। যার পুরো কৃতিত্ব ১২ বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম লালুর।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যখন টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধুর কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর সব মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র জমা দিচ্ছিল, তখন শহীদুল ইসলাম লালুও তার ব্যবহৃত স্টেনগানটি তাঁর হাতে তুলে দেয়। বঙ্গবন্ধু অবাক হন। লালুর পিঠ থাবড়ে বলেন, ‘সাব্বাস বাংলার দামাল ছেলে। ’ যখন সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে লালুর বাংকার ধ্বংসের কথা শুনলেন বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, ‘বীর বিচ্ছু। ’ বঙ্গবন্ধুর কোলে লালুর ছবি দিয়ে একটি পোস্টার পরে ছাপা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে লালু মুক্তিযুদ্ধের সর্বকনিষ্ঠ ‘বীরপ্রতিক’ খেতাবে ভূষিত হন।
যে বাংলাদেশের ইতিহাসে যারা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে রয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের এমন গৌরবের অধ্যায় আছে, স্পেশাল অলিম্পিকে বিশেষ শিশুরা স্বর্ণজয়ী হচ্ছে, সেই দেশের কোমলমতি শিশু-কিশোররা আজ বড্ড অসহায়। তাদের নির্দোষ-নির্মল চোখে চোখ রাখতে পারি না। যাদেরকে আমরা বলি, আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যত, তাদের চোখে পরিষ্কার আজ ভয় পাওয়া আর্তি। এ আর্তি আমার ভেতরটা তছনছ করে দিচ্ছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অপরাধী মনে হয় নিজের কাছে। আমাদের শিশুবেলায় এইরকম বৈরি পরিবেশ ছিল না। তাদের বর্তমানের কথা ভাবলে, বেফানা লাগে।
তাদের পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দেয়া হচ্ছে, অবরোধ দেয়া হচ্ছে, স্কুলে যাওয়া-আসার সময় ককটেল বিস্ফোরণের শিকার হচ্ছে তারা। পেট্রোল বোমায়, ককটেলে, গান পাউডারে, জ্বলন্ত বাস আগুনে পুড়ে, ফুটপাতে চলাচল করতে থাকাবস্থায় তারা লাশ হচ্ছে, অগ্নিদ্বগ্ধ হচ্ছে, বিকলাঙ্গ হচ্ছে।
রাজনীতির প্রতি তাদের মনের মধ্যে ভয়ানক ঘৃণা, ক্রোধ আর ক্ষোভ জমা হচ্ছে। এসব জমা হওয়ার গতি যদি বাড়তেই থাকে, তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনীতি থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হারাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। পুনর্বাসিত হবে হাইব্রিড ও ওয়ানটাইমাররা। যাদের কাছে দলের শৃঙ্খলা, আদর্শ, নীতিবোধ বলতে কিছু নেই। আসন্ন সময়ে পেশিশক্তি, টাকাওয়ালাদের দৌরাত্ম আরো বেশি দখল করে নেবে। আরো প্রকট হবে দুর্বৃত্তায়ন।
খুব উদ্বেগে আছি আমি, অনেকদিন থেকে এ উদ্বেগ কিছুইতেই কাটছে না, এসব রাজনীতির অপসংস্কৃতি দেখে দেখে আমাদের কোমলমতি শিশুরা আর রাজনীতিমুখি হবে না। ইতিমধ্যে রাজনীতিতে সহিংসতা ও দুর্নীতির ব্যাপকতা দেখে খুব কম শিশুই রাজনীতিবিদ হতে চায় বলে জাতিসংঘের নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শিশুদের এমন আগ্রহহীনতার পেছনে এই কারণটা অনুষজ্ঞ, তবে এটা কার্যকর সত্যও বটে- সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার ধারাবাহিকতা আমরা রাখতে পারি নি। মুক্তির সংগ্রাম থেকে শুরু করে সব রাজনীতির গৌরব-উজ্জ্বলতা আমরা তাদের সামনে আনতে পারি নি।
হাবীব ইমন : শিক্ষক, কবি, রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩ ঘণ্টা