বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ওবায়দুল কাদের এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অতি পরিচিত মুখ। জনাব ওবায়দুল কাদের ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে একজন তুখোড় এবং সার্থক রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই এ দুজন মন্ত্রী সম্প্রতি একই সুরে বেলা শেষের গান গাওয়া শুরু করেছেন। তবে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের লিড সিঙ্গার এবং রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাতে সুর মেলাচ্ছেন। যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি শেষ বেলার মন্ত্রী, একটু পরেই গোধুলি নামবে। এরপর ধুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসবে। আমি নতুন কোন স্বপ্ন দেখি না। ’
অন্যদিকে প্রায় একই সুরে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার হাতে সময় খুব কম। শেষ সময়ে আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ’
যোগাযোগমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘নতুন সময়ে নতুন মানুষ আসবে, নতুন আইডিয়া আসবে। দেশবাসী বিশ্বমানের উন্নয়ন, বিশ্বমানের যোগাযোগ দেখতে চায়। ’ অবশ্যই আগামীতে নতুন চিন্তা-ভাবনা এবং মন ও মানসিকতা নিয়ে নতুন মানুষের আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু বিশ্বমানের উন্নয়ন আর বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখতে চাইলেই তো আর দেখা যাবে না। তার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের কু-অভ্যাসগুলো নির্ণয় করে পরিবর্তন করা এবং নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে বড় করে দেখা ।
যাহোক, আমাদের প্রবল বিশ্বাস, আগামী প্রজন্ম দেশ ও জাতির জন্য ইতিবাচক কাজ করবে এবং দেশকে বিশ্বের বুকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। তবে আপনাদের, অর্থাৎ নেতা-মন্ত্রীদের, দায়িত্ব পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ও সঠিক পথ দেখানো এবং দেশ ও জাতির সেবায় উদ্বুদ্ধ করা। অকাল প্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত ‘ছাড়পত্র’ কবিতার দুটি লাইন ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’–কে খানিকটা বদলিয়ে আপনাদের বলা প্রয়োজন, ‘বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে যাবো, এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। ’ তাই আপনাদের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আপনাদের হাতে যেটুকু সময় আছে, সেই সময়টুকুই সৎভাবে পজেটিভ ওয়েতে ব্যবহার করুন। প্লিজ, সাঁঝবেলায় দিগন্তে অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করে বাকি সময়টুকু হেলা-ফেলায় কাটাবেন না। সময় কিন্তু কখনোই ফিরে আসে না।
কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। ’ তাই আপনারা এই মন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য গঠনমূলক কাজ করার অভীষ্ট লক্ষে এগিয়ে যান। দেশবাসী আপনাদের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। এছাড়া আগামীতে জনগণ আপনাদের স্মরণ করবে এবং নিঃসন্দেহে আপনারা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ।
শ্রী চিন্ময়ের লেখা এবং গাওয়া একটা গানের কথা উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা শেষ করছি । ‘বেলা শেষের গান, শুনবে আমার প্রাণ / বেলা শেষের গান, আশা নদীর বাণ / বেলা শেষের গান, শান্তি অফুরান। ’
[লেখকঃ অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী গল্পলেখক ও ছড়াকার । ইমেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময় ০৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১২