২২ মার্চ ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নশীপ ফাইনাল খেলার পরে সমগ্র বাংলাদেশ এতখানি একাত্ম হয়ে আর কখনও কোনো ম্যাচ জেতার জন্য কায়মনো প্রার্থনা কিংবা প্রত্যাশা করেনি।
বিশ্বকাপজয়ী ভারতের বিপক্ষে জয়ের পরেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং সামাজিক মিডিয়ায় বিষয়টি শীর্ষস্থানীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। দেশের এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। শ্রীলংকাকে হারোনোর পর সেই উদ্দীপনা আত্মবিশ্বাসে দানা বাধে। পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নানা রকম খবরাখবর প্রচারের মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে আশান্বিত করে। ফেইসবুক, ব্লগ, টুইট্যারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে নানা রকম পোস্টার, কৌতুক এবং আশার বাণী ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা জানি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই এশিয়াকাপেই শচীন টেন্ডুলকার তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শততম শতকটি ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন। তার সেই ঐতিহাসিক কৃতিত্বকে সম্মান জানানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকারকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে মাতৃস্নেহে আশীর্বাদ করেছেন। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ফাইনালে উন্নীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ দলকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনসমূহ তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।
দিবা-রাত্রির এশিয়া কাপের ফাইনালে আমরা হয়তো হেরেছি কিন্তু এই হার লজ্জার নয়। উনিশ-বিশের পার্থক্য শিরোপা নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে কিন্তু আমাদের অর্জিত এবং প্রদর্শিত সামর্থ্যকে আর কেউ খাটো করতে পারবে না। আমাদের ছেলেরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে। তাই স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষ, টেলিভিশনের পর্দায় চোখরাখা দর্শকরা তাদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করেছে। সজল চোখে বাড়ি ফিরেছে, তাদের সাথে কেঁদেছে। নতুন স্বপ্নে বুক বেধেছে। এই ম্যাচের ফলাফল নিয়ে যেকোনো ক্রিকেটবোদ্ধাই বলবেন- এই খেলায় পাকিস্তান জেতেনি কিংবা বাংলাদেশ হারেনি, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটেরই জয় হয়েছে।
উক্ত টুর্নামেন্টের শিরোপা হয়তো আমাদের অধরাই থেকেছে। কিন্তু বাংলাদেশ দল যদি শিরোপা লাভ করতো তাহলে হয়তো আমরা পুরো দলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দিতাম। বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপে রানার্স আপ হয়েছে। এটাও কম কিছু নয়। তারা ফাইনালে জয়ী হতে পারেনি কিন্তু এই পরাজয়ের অর্থ এই নয় যে, তারা আর কখনও জয়ী হতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে সবিনয়ে অনুরোধ করছি, আপনি কি আমাদের ছেলেদেরও একবার মাতৃস্নেহে কাছে ডাকতে পারেন না?
লেখক: গল্পকার, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।
[email protected]
বাংলাদেশ সময় ১০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ