ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আ’লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার আর নেই

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১০
আ’লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার আর নেই

চট্টগ্রাম: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সার আর নেই (ইন্না ইলাহি....রাজিউন)।

শনিবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, গত ২৮ আগস্ট কক্সবাজারে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম ফেরার পথে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।

তিনি জানান, প্রথমে কয়েকদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তাকে ঢাকায় এনে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর তাকে আবারও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা আজ (শনিবার) বিকেলে তিনি মারা যান।

রাজনীতিতে সৎ, পরিচ্ছন্ন ও নির্লোভ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সব মহলে সমাদৃত ছিলেন আতাউর রহমান খান কায়সার।

তার জন্ম ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন গ্রামে।

তিনি ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামের আরেক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এম এ আজিজের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ তিনি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তিনি প্রায় এক বছর কারাভোগ করেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর তাকে প্রথমে রাশিয়ায় এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আতাউর রহমান খান কায়সার অবসরে কবিতা লিখতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রয়েছে তার একাধিক কবিতার বই।

মৃত্যুকালে আতাউর রহমান খান কায়সার তিন কন্যা রেখে গেছেন। ২০০৮ সালে মারা যান তার স্ত্রী ও তৎকালীন নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বেগম নীলুফার কায়সার।

এদিকে, আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মরদেহ বিকেল ৫টার দিকে নগরীর চন্দনপুরা এলাকার বাসভবনে আনা হলে সেখানে বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

তাকে একনজর দেখতে বাসভবনে যান জাতীয় সংসদের হুইপ আসম ফিরোজ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক মেয়র মীর মো. নাছিরউদ্দিনসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার সাংসদ ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা।
আতাউর রহমান খান কায়সারকে ৫১ বছরের বন্ধু উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশের জনগণের সেবা করে গেছেন কায়সার। বারবার মতা পেলেও কখনো মতার স্বাদ নেননি তিনি। ’

সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আতাউর রহমান খান কায়সার ছিলেন আমাদের অভিভাবক। রাজনীতির বিভিন্ন প্রয়োজনে পরামর্শের জন্য বারবার তার কাছে ছুটে গেছি। ’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মো. নাছিরউদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতির উজ্জ্বল নত্রগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন। আতাউর রহমান খান কায়সারের মতো ত্যাগী, নির্লোভ, নির্ভীক নেতাদের হারিয়ে চট্টগ্রাম এখন রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। ’

এদিকে আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম।

আতাউর রহমান খান কায়সারের পরিবোরের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এম এ নাসের বাংলানিউজকে জানান, আগামীকাল সকাল ৯টায় তার মরদেহ জন্মস্থান আনোয়ারার বারখাইন গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে প্রথম নামাজে জানাযা শেষে তাকে আবারও নগরীতে ফিরিয়ে আনা হবে। বাদ আসর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।