ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

দুর্নীতিবাজ ও কোন্দলে জড়িত নেতাদের কারণে বিব্রত খালেদা

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০
দুর্নীতিবাজ ও কোন্দলে জড়িত নেতাদের কারণে বিব্রত খালেদা

ঢাকা: বিএনপি’র কতিপয় নেতার মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতিবাজ বলে চিহ্নিতদের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। তিনি এসব সমস্যা সমাধান ও অভিযোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন।



দলের সিনিয়র থেকে মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পারস্পরিক বিরোধ মেটানো নিয়ে খালেদা জিয়া অস্বস্তিকর পরিস্থিতে রয়েছেন বলে দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।

অর্থের বিনিময়ে জেলা ও থানা কমিটি গঠনে পক্ষপাতিত্ব করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা- এমন অভিযোগে খালেদা জিয়া ঈদের আগেই দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলে জানান দলটির একজন সিনিয়র নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দলে দুর্নীতিবাজদের প্রভাব এখনও বেশি। তারাই দল চালাচ্ছেন বলে অনেক সিনিয়র যোগ্য নেতারা মাঝে মধ্যে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করা ছাড়া সাংগঠনিক কাজে অংশ নিচ্ছেন না। এছাড়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই মির্জা আব্বাসকে জেলে থাকতে হচ্ছে- এমন কথাও উল্লেখ করেন তারা।

মধ্যম সারির নেতারা বলেন, এসব কারণেই দলের মধ্যে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধীদল হিসেবে বিএনপির ওপর সরকারের চাপ, দলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ওয়ান/ইলেভেন সময় সংস্কারের পক্ষে যাওয়ার কারণে দলের বিভক্তি, বিএনপির সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা জেলে এবং কিছু নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। দলের ভেতরে এ অবস্থার কারণে ভারতের সঙ্গে সরকারের অসম চুক্তি ও দলীয় কর্মীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের আগে পরে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত পাঁচ মাসে তিন দফা মুখামুখি সংর্ঘষ হয়েছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মীদের মধ্যে। রমজানের সপ্তাহখানেক আগে মুক্তাঙ্গনে এ ধরনের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবকদলের কর্মীরা নীরবের বক্তব্য দেওয়ার সময় জুতা ও বোতল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নাজুক দেখে ব্যারিস্টার মওদুদ মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। পরে অন্যান্য সিনিয়র নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলের সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা দলের সিনিয়র নেতা হলেও তারা যেন দুই মেরুর দুই বাসিন্দা। এ দুই নেতার কারণে রাজধানী ঢাকায় বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। এ দুই নেতার বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু খালেদা জিয়া নন, দলের অনেক নেতাই বিব্রত।

গত বছর বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসেই সংস্কারপন্থি ইস্যুতে দুই নেতার মধ্যে তর্কবির্তক হয়। এর জের ধরেই একই কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদ। এ জন্য তাকে এ বছরের ২৭ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

মির্জা আব্বাসের সমর্থকদের অভিযোগ, সাদেক হোসেন খোকার ইন্ধনেই মির্জা আব্বাসকে জেলে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও নবী উল্লাহ নবীর দ্বন্দ্ব যেন চিরদিনের। দু’জনই একই এলাকার নেতা। একজন সাবেক এমপি অন্যজন ওয়ার্ড কমিশনার। তাদের দ্বন্দের কারণেই যাত্রাবাড়ি-সয়েদাবাদ এলাকায় বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভিক্ত।

বিএনপির’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দ্বন্দ্ব পুরোনো। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে এ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এর জের ধরে নাজমুল হুদা সম্প্রতি ব্যারিস্টার মওদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন।

এদিকে, আমানের রাজনীতির শুরুর দিকে সর্ম্পক ভালো থাকলেও ১৯৯৪ সাল থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েস্বর চন্দ্র রায় ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমান দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর গয়েস্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ের সংসদ সদস্য না হওয়ার বড় বাধা ছিলেন আমান উল্লাহ আমান। সম্প্রতি দলের ঢাকা জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই দুই নেতার মধ্যে সর্ম্পকের আরও অবনতি ঘটে। এতে গয়েস্বর ক্ষুব্ধ হয়ে দল থেকে পদত্যাগও করেছিলেন। পরে  চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই উল্লেখ করে গয়েস্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অপরাধীদের বিরুদ্ধে, তিনি কোনো দুর্নীতিবাজকে দলে প্রশয় দেবেন না। আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের স্বার্র্থেই এদের দল থেকে দূরে রাখা হবে। ’

ঢাকা সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব নেই। আমরাতো সবাই একই আদর্শের রাজনীতি করি। ’

মির্জা আব্বাসের অনুসারীদের অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি ব্যস্ত পরে কথা বলবো। ’

যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব বাংলানিউজকে বলেন, আমার সঙ্গে সোহেলের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সে খুব ভালো মানুষ, তবে যতো সমস্যার সৃষ্টি করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী সপু। সোহেল যদি সপুকে বিরত রাখতো তাহলে এ ঘটনা ঘটতো না। ’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার  সঙ্গে নীরবের কোনো দ্বন্দ নেই। তবে পর পর দু’দিন যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। এ বিষয়টি ম্যাডাম নিজেই সমাধান করে দিয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না। ’

বাংলাদেশ সময় ১৪৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad