টাঙ্গাইল: বিএনপির প্রায় দুইশ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দায়েরকৃত এই ছয়টি মামলায় অজ্ঞাত আরও পাঁচশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সারা জেলায় তাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন। পুলিশ প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ ও বিএনপির নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর দিন টাঙ্গাইল পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি ও মির্জাপুর থানায় একটি নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ১২০ জনকে। মির্জাপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। একইভাবে ৩০ অক্টোবর নাগরপুর থানায় ৪৮ জন বিএনপির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ৩১ অক্টোবর কালিহাতী থানায় ১৬জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং ৯০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। দেলদুয়ার থানায় ২ অক্টোবর ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সবশেষ গোপালপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা জানান, এসব মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মামলাগুলোতে যে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা কাল্পনিক। ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি বর্ষণের মত ঘটনার কথাও কোনো কোনো মামলায় রয়েছে। অথচ ঘটনাস্থলে বা আশপাশের কেউ গুলি বা ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পায়নি। এগুলো সব গায়েবি ঘটনা।
নাগরপুর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি রেজাউল ইসলাম বলেন, এক মাসেরও বেশি হয় নাগরপুরে যাই না। তবুও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।
ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদুর রহমান জানান, গত রোববার ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী আনোয়ারকে গত বছর ২২ নভেম্বর দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতে যাওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে ওই মামলায় আনোয়ারুল জামিনে আছেন। পরে পার্শ্ববর্তী কালিহাতী থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, পুরো জেলায় কয়েক হাজার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পুলিশ প্রতি রাতেই জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, তার বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারছেন না। মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাঠ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্যই সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে এসব মিথ্যা গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
নাগরপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এগুলো তারা বলবেই। সুনির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। যারা জড়িত তাদেরই আসামি করা হয়েছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২৩
আরএ