ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২৭ আগস্ট

স্পেশাল ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
খালেদার দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২৭ আগস্ট

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের অসমাপ্ত জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে আগামী ২৭ আগস্ট।

সোমবার (১০ আগস্ট) হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের আংশিক জেরা শেষে এ দিন ধার্য করেন আদালত।

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

দুই মামলায়ই এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী হারুন-অর রশিদ। সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে তাকে জেরা শেষ করেছেন তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। আগামী ২৭ আগস্ট জামিনে থাকা অপর আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে এরপর জেরা করবেন তার আইনজীবী টিএম আকবর রশিদ। প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে এর আগেই জেরা শেষ হয়েছে।

পরবর্তী দিনে এ মামলার অন্য চার সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এছাড়া জিয়াউল হক মুন্নাকে আগামী তারিখের আগে আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে

শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন খালেদা। তার পক্ষে স্বাস্থ্যগত কারণে অনুপস্থিতির অনুমোদন ও মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে দু’টি এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রাখার দু’টিসহ মোট চারটি আবেদন জানান তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। ছয় সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানিয়ে শুনানিতে খন্দকার উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যগত কারণে আদালতে আসতে পারেননি খালেদা জিয়া। তিনি চোখের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তাই ছয় সপ্তাহের সময় প্রয়োজন।

আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে বাকিগুলোর বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে নথিভুক্ত রেখেছেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

খালেদা ছাড়া জামিনে থাকা আসামিরা আদালতে উপস্থিত আছেন।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৭২ কার্যদিবসের মধ্যে ৬০ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১২ দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
এমআই/টিএইচ/এইচআর/এএসআর

** বাদীকে আসামিপক্ষের জেরা চলছে
** কার্যক্রম মুলতবির আবেদন খালেদার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।