ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

যোগ্যতার প্রশ্নে বিএনপিতে অসন্তোষ, অরাজকতার শঙ্কা

বাংলানিউজ পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৫
যোগ্যতার প্রশ্নে বিএনপিতে অসন্তোষ,  অরাজকতার শঙ্কা

ঢাকা: অযোগ্য ও ব্যর্থদের সরিয়ে দেওয়ার খবরে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিএনপির রাজনীতিতে। কেন্দ্র থেকে দেওয়া সাম্প্রতিক এ বিষয়ক চিঠি সরকার বিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ব্যর্থতার জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া দলটিতে অবশ্যম্ভাবী বিভাজনের আশঙ্কাকেই স্পষ্ট করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।



দলীয় সূত্র বলছে, অযোগ্য ও ব্যর্থদের সরিয়ে দিয়ে যোগ্য ও সাহসীদের নেতৃত্বে বসানোর এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কার্যত দল থেকে তার বিরোধিতাকারীদেরই সরিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েছেন।

কেননা সম্প্রতি তৃণমূল ইউনিটগুলোতে পাঠানো কেন্দ্রের চিঠিতে ‘যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবি’ বলে উল্লেখ করা হলেও সেই যোগ্যতার রূপরেখা স্পষ্ট নয়। উপরন্তু যোগ্য নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক এমপি প্রমুখের পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু যাদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে গত কয়েক বছরে রাজপথের আন্দোলনে তাদের অধিকাংশেরই টিকিটিরও দেখা মেলেনি।

তাছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থি বনে যাওয়া নেতাদের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি চিঠিতে।

বরং বলা হয়েছে, ‘যাঁরা দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে থেকে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নিজেদেরই পদ ও দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে যোগ্যতর ব্যক্তিদের দলের পদ ও দায়িত্ব নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। ’

কিন্তু এই কথার সঙ্গে, ‘তারা এই সংগত কাজটি করতে না চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর এলাকার সচেতন, নিবেদিত ও সংগ্রামী নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব হবে দলের স্বার্থেই তাঁদের পরিবর্তে যোগ্যতর, সাহসী নেতা-কর্মীরা যাতে দলের পদ ও দায়িত্ব পান, তা নিশ্চিত করা’ জুড়ে দিয়ে কার্যত তৃণমূলকে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেননা, এর ফলে সব ইউনিটেই একাধিক গ্রুপের শোডাউন আর শক্তিপ্রয়োগের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
 
এছাড়া চিঠিতে ‘ব্যক্তিস্বার্থ, আপসকামিতা আন্দোলন-সংগ্রামকে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’ বলে উল্লেখ করা হলেও কাউকে চিহ্নিত করার ঝুঁকি নিতে চায়নি কেন্দ্র।

দলীয় সূত্র বলছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বররের মধ্যে সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠনের যে নির্দেশ কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে করতে পারার সামর্থ অধিকাংশ ইউনিটেরই নেই।

স্বাভাবিক সময়েই যেখানে কেন্দ্রের পক্ষে বছরের পর বছর চেষ্টা করেও সব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি, সেখানে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সে কাজ যথাযথভাবে করতে সক্ষম হবেন সেটা ধরে নেওয়া বোকামি হবে বলেই মনে করেন রাজনীতি বোদ্ধারা।

এর আগে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহম‍ান দলে ‘গণছাঁটাই’ চালানোর যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, বর্তমান ‘যোগ্যতা’র মিশন সেই উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে মাইনাস করে বিএনপি পুনর্গঠনের যে তৎপরতা ভেতরে ভেতরে চলছে তা ঠেকাতেই মূলত যোগ্যদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের কৌশল নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এর মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে থাকাকালে তাকে মাইনাস করার চেষ্টা যেমন শক্ত বাধার মুখে পড়বে, তেমনি স্থানীয় কাউন্সিলের মাধ্যমেই বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা করে নিতে চাইবেন খালেদা বিরোধীরা। এর অর্থ হলো-দলের ভেতরে ক্রমশ: মাথা চাড়া দিতে  থাকা ‘খালেদা-তারেক’ মাইনাস ফর্মুলা অনেকটাই ঝুলে যাবে। কাউন্সিলে নতুন কমিট গঠনের ডামাডোলে চাপা পড়ে যাবে খালেদাবিরোধী সব তৎপরতা।

দলীয় সূত্র বলছে, দু’একদিনের মধ্যে লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়া কার্যত তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।

কিন্তু দলের এই পুনর্গঠন দীর্ঘ দিনের দাবি হলেও রাজনীতির নিরন্তর নদে অনেক জল গড়িয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে কাজটি কঠিন হয়ে উঠেছে বলেও আলোচনা চলছে দলীয় পরিমণ্ডলে।

এর আগে গত বছর খালেদা জিয়া যখন ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে ‍ঝাঁপিয়ে পড়ার আবহান জানিয়েছিলেন, তখনই দাবি উঠেছিলো-দল গোছানোর। দল না গুছিয়ে আন্দোলনে কেনো যাওয়া-সে প্রশ্নও উঠেছিলো ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরপর বর্তমান সরকারের বছর পূর্তিতে খালেদা জিয়া যখন টানা অবরোধ ডেকে বসেন তখনোও একই কারণে বিস্মিত হয় তৃণমূল।

সরকার বিরোধী আন্দোলন একের পর এক ব্যর্থ হওয়ার জন্য কার্যত কেন্দ্রকেই দায়ী করে বিএনপির তৃণমুল। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামেই যাদের মাঠে নামতে দেখা যায় না। ত‍াই অনেকটাই অকার্যকর কেন্দ্রীয় কমিটিকে বহাল রেখে তৃণমূলকে আমূল পালটে ফেলার উদ্যোগে দলের সর্বস্তরে বিংশৃঙ্খলার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৫
জেডএম/   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।