ঢাকা: রাজনৈতিক অঙ্গন ও নানা মহলের সমালোচনার মধ্যেই ১৫ আগস্ট (শনিবার) রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ৭০ পাউন্ড ওজনের পাঁচ পাঁচটি কেক কেটে নিজের ৭০তম জন্মদিন উদযাপন করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার এই দিনে জন্মদিন উদযাপন না করতে তার প্রতি আহ্বান ছিল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের।
কিন্তু সব মহলের অনুরোধ, পরামর্শ ও ‘হুমকি’ উপেক্ষা করে ‘জাতীয় শোক দিবস’ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আনা পাঁচটি কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করলেন খালেদা জিয়া।
তবে অন্য বছরগুলোতে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ০১ মিনিট) কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করলেও এবার দিনের শেষ প্রহরে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন তিনি।
শনিবার (১৫ আগস্ট) রাত ৯ টা ১০ মিনিটে ঘিয়ে রংয়ের জর্জেট শাড়ি পরে গুলশান কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া।
এরপর জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেছারুল হকের পরিচালনায় মোনাজাতে শরিক হন তিনি।
রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনা ৭০ পাউন্ড ওজনের কেকটি কাটেন খালেদা জিয়া।
এর পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে নিয়ে সঙ্গে নিয়ে কাটেন ছাত্রদলের কেক।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে কাটেন ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আনা কেকটি।
এরপর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সঙ্গে নিয়ে কাটেন যুবদলের কেক এবং হাবীব উন নবী সোহেলকে নিয়ে কাটেন স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে আনা কেক।
কেক কাটার সময় মুনশী ওয়াদুদের লেখা, ইথুন বাবুর সুরে মনির খানের গাওয়া জন্মদিনের গান বাজানো হয়।
একে একে পাঁচটি কেক কাটা শেষ হলে বিএনপি, ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় গুলশান কার্যালয় এবং এর বাইরে জড়ো হওয়া কয়েক শত নেতা-কর্মী ‘শুভ শুভ শুভ দিন/খালেদা জিয়ার জন্মদিন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অবশ্য কেক কাটার আগে হাত তালি ও স্নোগান না দেওয়ার জন্য ইশারায় নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।
এদিকে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ের ভেতরের ফটক ও কনফারেন্স রুম গোলাপি শিফন কাপড়, লাইটিং ও নানা প্রকারের ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
বাইরে কয়েক শত নেতা-কর্মী ভিড় জমালেও মহিলা দলের কর্মীরা ছাড়া অন্যদের কার্যালয়ের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
জন্মদিনের কেক কাটার সময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাইয়ুম, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর বিক্রম, শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সহ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসইউং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন কোনো দিনই নিজের জন্মদিন পালন করেন না। দল এবং অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেই শুভেচ্ছা তিনি গ্রহণ করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আনা এই কেকগুলো এতিমখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে কেক কাটার অনুষ্ঠান শেষ করে গুলশান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিজ দপ্তরে ওঠার সময় অপেক্ষমান সাংবাদিকরা কিছু বলার অনুরোধ করলে খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। তবে তার জন্মদিন ও সাল নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সর্বশেষ করা পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্ম সাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৬ সালে।
খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও বাবার কর্মস্থল দিনাজপুরে জন্ম হয় খালেদার। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।
১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় খালেদা জিয়ার। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নানা পটপরিবর্তনে জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের দিকে চালিত করার যে চেষ্টা করা হয়, বিতর্কিত জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে কার্যত তা-ই উদযাপন করেন খালেদা।
১৯৮১ সালে ৩০ মে স্বামী জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোটের নেত্রী হিসেবেও খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে’ জন্ম নেওয়া দল বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন খালেদাই।
১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে ফের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারান খালেদা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫/আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা
এজেড/এইচএ/জেডএম/এমজেএফ