ঢাকা: ১৫ আগস্ট বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে দিয়ে কেক কাটিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি দিনটিকে উদযাপন করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
তারা বলেন, শুধু ক্ষমতার পালা বদলের জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া দুই মাসের মধ্যে সরকার পতন সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আজকে যদি ১৫ আগস্ট না হতো, জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি হতো না। বিএনপির সৃষ্টি হতো না। খালেদার সৃষ্টি হতো না। প্রধানমন্ত্রীও হতে পারতেন না। তাই, ১৫ আগস্টের পেছনে তাদের যে অবদান, তাদের যে চক্রান্ত, তাদের যে দম্ভ, তার জন্যই আজকে এ জন্মদিন পালন করা হয়।
তিনি বলেন, ৯৩ দিন মানুষের ওপর অত্যাচার করে মানুষের প্রতিরোধের মুখে তিনি যেভাবে লেজ গুটিয়ে আত্মসমর্পণ করে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন জন্মদিনেও লেজ গুটিয়ে অন্দরঘরে প্রবেশ করবেন।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগে প্রথম প্রহরে কেক কেটেছেন। এবার শেষ প্রহরে কেটেছেন। তিনিও শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। কারণ, ষড়যন্ত্র বেশিদিন টেকে না।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, খালেদা জিয়াকে বলা হয়েছিল লাইনে আসেন, এটা বাদ দেন। তিনি এবার দিনে না করে রাতে করেছেন।
তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, আমার কাছে খবর আছে। কী খবর আছে! এই দুই মাসের মধ্যে সরকারের পতন হবে। কেমন করে পতন হবে, খালেদা জিয়া বলেন তো!
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সরকার পতনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। যদি দেশে নির্বাচন হয়, অথবা দেশে যদি সাংঘাতিক আন্দোলন থাকে, দেশে অভ্যুত্থান অবস্থা থাকে। দুইটার কোনোটাই দেশে নাই। তাহলে সরকারের পতন কেমন করে হবে, আপনি বুঝিয়ে বলেন তো!
অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসার শাস্তির বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানে লেখা আছে, যদি অসাংবিধানিকভাবে কোনো সরকারের পতন হয়, কেউ যদি করে, তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। এটাই সংবিধানে লেখা আছে।
তিনি খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার পতন হবে খালেদা জিয়া বুঝলেন কীভাবে! ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তিনি এ খবর পেলেন কোথায়! এভাবে দেশ চলতে পারে না!
তিনি সম্প্রতি গঠিত ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’-এর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আবার কিছু উদ্বিগ্ন বুদ্ধিবীবী সমাজ, আপনারা কোথা থেকে এলেন! তারা বলেন, দেশে পার্লামেন্ট দ্বি-কক্ষ করা দরকার। রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া দরকার। সংবিধান কমিশন বানানো দরকার। আপনারা কার প্রতিনিধিত্ব করেন? কোনো রাজনৈতিক দলের নাকি কোনো পার্লামেন্টের?
তিনি বলেন, সংবিধানে লেখা আছে, যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুযায়ী আপনারা তো কারো প্রতিনিধিত্ব করেন না। আপনারা কোথায় ছিলেন এতোদিন!
যখন দেশে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত সামরিক সংবিধান ছিল। একটি শব্দও তো বলেন নাই। সামরিক সংবিধানকে পাল্টিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাহাত্তরের সংবিধান ফেরত নিয়ে এসেছেন। এটি মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান। এ সংবিধান আকাশ থেকে পড়েনি। এটি গায়েবি সংবিধান নয়। এটি গণপরিষদে পাস করা সংবিধান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাতে দেখলাম, ঠিকই খালেদা জিয়া তার জন্মদিন পালন করেছেন। এটা বিচিত্র কিছু না। এ দিনটি তাকে পালন করতেই হবে। এতে আমরা অবাক হই না।
তিনি বলেন, যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে। বুলেট বঙ্গবন্ধুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু আদর্শ কেড়ে নিতে পারে নাই।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়ার কেক কাটায় আমরা বিস্মিত হই না। কারণ, এরা হলো একাত্তরের ঘাতকদের দোসর, পঁচাত্তরের ঘাতকদের দোসর। জিয়াউর রহমান ও তার দল এবং এরশাদ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ওই খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে, প্রশয় দিয়েছে। তাদের লালন-পালন করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো, বঙ্গমাতাকে হত্যা করলো, এ বিষয়গুলো যখন আমার মনে আসে, তখন আসলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। এতো বড় একটা হত্যাকাণ্ড, কোনো মানুষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে, সেটা আমার কাছে বিশ্বাস হয় না।
তিনি বলেন, আজকে শোক দিবস। এখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন। আপনারা একবার অনুভব করুন। তার মনের ভেতরে, হৃদয়ের ভেতরে কী হচ্ছে! একটু আন্দাজ করতে পারেন, এতো ব্যথা নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে রাজনীতি করছেন, সেটাই বিষ্ময়কর বিষয়। যেভাবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, মা নাই, বাবা নাই। ভাই নাই, ভাবি নাই। ছোট্ট ভাই রাসেল নাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে সয়েছেন সে জ্বালা! একবার চিন্তা করুন, শেখ রেহানার কথা। আমি কিছুটা অনুভব করতে পারি! আমি শুধু বাবাকে হারিয়েছি। আমি আবেগে কথাগুলো বলছি না। এটা বাস্তব। আমাদের বুকের ভেতর যে জ্বালা, সেটা আমরা ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এসকে/এমইউএম/এবি/এএসআর