ঢাকা: বিএনপি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। গত কয়েক মাস দলের কোনো কর্মকাণ্ডে ভিড়ছেন না তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরের রাতেই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসেন।
এর পর ১৬ জুলাই স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েই সোজা গুলশানের বাসায় গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসেন।
গত ৭ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরের দিন ৮ আগস্ট গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু শীর্ষ নেতাই নয়, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ডাকের অপেক্ষায় না থেকে সোজা গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসছেন। খালেদা জিয়াও জেলমুক্ত নেতাদের জন্য তার দরজা খোলা রেখেছেন। কোনো প্রকার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গুলশানের বাসা অথবা অফিসে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাচ্ছেন বিএনপির কারামুক্ত নেতারা।
কিন্তু টানা চার মাস কারাবন্দি থাকার পর গত ২২ মে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কূটনৈতিক কোরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শমসের মবিন চৌধুরী।
তাকে ছাড়াই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক এবং কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার পার্টি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ লন্ডন সফরের সব প্রক্রিয়া শমসের মবিন চৌধুরীকে ছাড়াই সম্পন্ন করছেন বিএনপি প্রধান।
সূত্রমতে, দলীয় কর্মকাণ্ডে শমসের মবিন চৌধুরীর অনুপস্থিতি নিয়ে বিএনপির ভেতরে নানা প্রশ্ন উঠছে। সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে তার গতিবিধি। কেউ বলছেন, কূটনৈতিক কোরের প্রভাবশালী এই নেতা নিজ থেকেই সরে যাচ্ছেন? কারো কারো ধারণা, দল থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের এই সংকট মুহূর্তে কাউকেই দূরে ঠেলে দিতে চান না বিএনপি প্রধান। বরং অতীতের সব তিক্ততা ভুলে সবাইকে সংগঠিত করে দলের ভিত আরো মজবুত করতে চান তিনি। এমন চিন্তা থেকেই অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় সংসদের এলডি (লাঞ্চ অ্যান্ড ডিনার) হলে ধুমধাম করে ছেলে বিয়ে দেওয়া নেতাকেও সম্প্রতি গুলশান অফিসে এসে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দিয়েছেন।
সূত্রমতে, সব দ্বন্দ্ব-বিভাজন দূরে ঠেলে খালেদা জিয়া যখন দলের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মত চলছেন শমসের।
দলীয় কোনো এজেন্ডা ছাড়াই ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দূতাবাস ও হাই কমিশনে গিয়ে বৈঠক করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুলাই সকালে আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে যান শমসের মবিন চৌধুরী। এরপর ১২ জুলাই বিকেলে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে গিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
সূত্রমতে, দলের কূটনৈতিক কোর থেকে স্বেচ্ছায় সরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাস ও হাইকমিশনে শমসের মবিনের এ ঘোরাঘুরি সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
তারা বলছেন, দলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে শমসের মবিন বিদেশি মিশনগুলোতে অবাধে চলাফেরা করলেও কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতেন না। কিন্তু দলের কূটনৈতিক ইভেন্টগুলোতে অনুপস্থিত থেকে নিজের খেয়াল-খুশি মত কূটনীতি পাড়ায় ঘোর-ঘুরি মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। শমসের মবিন চৌধুরীর এই আচরণকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ হিসেবে নিতেই পারেন খালেদা জিয়া।
এ ব্যাপারে জানতে শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সবগুলো নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। বাসার নম্বরে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।
তবে বিএনপির কূটনৈতিক কোরের আরেক গরুত্বপূর্ণ নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
সূত্রমতে, শুধু কূটনৈতিক কোরই নয়, বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতার ক্ষোভ রয়েছে শমসের মবিন চৌধুরীর ওপর। তাদের অভিযোগ, শমসের এর কারণেই খালেদা জিয়ার কাছে ভিড়তে পারেননি তারা। শমসেরসহ কূটনৈতিক কোরের অপর তিন সদস্য এবং খালেদা জিয়ার দুই জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সব সময় খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটা বলয় তৈরি করে রাখতেন। এই বলয় ভেদ করে অনেকের পক্ষেই সম্ভব হত না খালেদা জিয়ার কাছে যাওয়া। এই শমসের মবিনদের পরামর্শেই গত তিন বছর বেশ কয়েকটি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন বিএনপি প্রধান।
অথচ দলের সংকটকালে স্বেচ্ছায় দূরে সরে আছেন শমসের মবিন চৌধুরী। অনেক নেতা-কর্মীরই অভিযোগ, সরকারের সঙ্গে একটা দফা-রফা করে ফেলেছেন শমসের মবিন। এ কারণেই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার কাছে আসেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত দলের কাউকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখতে চাই না। এখন কী কারণে শমসের মবিন দলীয় প্রোগ্রামে আসছেন না, সেটি তার সঙ্গে আলাপ না করে বোঝা যাবে না। ব্যক্তিগত বা স্বাস্থ্যগত সমস্যাও থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
এজেড/জেডএম