ঢাকা: ২৭ জুলাই ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুর ১ দিন পর ২৯ জুলাই খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকায় ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে গিয়ে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
ওইদিন বিকেলেই নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে মিডিয়াকে জানানো হয়, ৩০ জুলাই বিকেলে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে যাবেন শোক বইয়ে স্বাক্ষর করতে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ জুলাই বিকেল ৪টায় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে সঙ্গে নিয়ে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করে আসেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপির পক্ষ থেকে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করার পর আগাম ঘোষণা দিয়ে ‘নয়াপল্টনের মুখপাত্র’ ড. আসাদুজ্জামান রিপনের শোক বইয়ে স্বাক্ষর ভালোভাবে নিতে পারেননি দলের সিনিয়র নেতারা।
কেউ কেউ বিষয়টিকে ‘বিএনপির মধ্যে আরেক বিএনপির’ আবির্ভাব হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, দলীয় প্রধানের নির্দেশে সিনিয়র নেতারা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়ে আসার পর ‘নয়াপল্টনের মুখপাত্র’ যেটি করেছেন তা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
জানা গেছে, মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়ে ৩০ জুলাই ড. আসাদুজ্জামান রিপন ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে গিয়ে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করার পর ড. আব্দুল মঈন খান বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কাছে জানতে চান, ‘নয়াপল্টনের মুখপাত্র’ই যদি ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের শোক বইয়ে স্বাক্ষর করবেন, তাহলে আগের দিন শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হয়েছিল কেন?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরেও এনেছেন সিনিয়র নেতারা। জানতে চেয়েছেন দপ্তরের বা মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা নেতাদের কর্মআওতা সম্পর্কে। তবে বিভিন্ন দিক থেকে প্রচণ্ড চাপে থাকা বিএনপি প্রধান এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো অ্যাকশনে যেতে চান না। সিনিয়র নেতাদের তিনি ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, দলের শীর্ষ নেতারা গেছেন চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে আর আমি গিয়েছিলাম দলের পক্ষ থেকে। সুতরাং এ নিয়ে কে কী বললেন, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
সূত্রমতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবর্তমানে নয়াপল্টনে দলের মুখপাত্র হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের ছোট-খাট ইস্যুতে মাঝে মধ্যে দুয়েকটি প্রেস ব্রিফিংয়ের অলিখিত অনুমতি দিয়ে রেখেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু নয়াপল্টনের বেশিরভাগ মুখপাত্রই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ চালিয়ে যান।
প্রটোকল ব্রেক করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমনকি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবও হরহামেশা দিয়ে থাকেন নয়াপল্টনের মুখপাত্ররা।
জানা গেছে, এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তো বটেই, তৃণমূল নেতারাও বিব্রতবোধ করেন। তাদের মতে, নিজেদের জাহির করার জন্য একটু কিছু হলেই মিডিয়া ডেকে কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দেন এসব মুখপাত্র।
সম্প্রতি কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একই বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের নামে শোকবাণী, শুভেচ্ছাবাণী বা বিবৃতি পাঠানোর পর ড. আসাদুজ্জামান রিপন নিজের নামে শোক-শুভেচ্ছা বাণী বা বিবৃতি পাঠিয়ে দেন। ওই সব বিবৃতির ওপর বোল্ড লেটারে লেখা থাকে ‘বিএনপির মুখাপত্র ডা. আসাদুজ্জামান রিপনের শোকবাণী। ’
এ ব্যাপারে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এসব বিষয়ে কিছু জানার থাকলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে আমাকে প্রশ্ন করবেন। টেলিফোনে কোনো মন্তব্য আমি করি না।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু যে নয়াপল্টনের মুখপাত্ররাই বার বার ঝামেলা পাকান, তা নয়। দলে সমন্বয় না থাকায় মুখপাত্রদের বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দিয়েও মাঝে মধ্যে বড় ধরনের ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
গত ২৯ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর নয়াপল্টন কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, ওই রায়ে বিএনপি বিস্মিত হয়েছে, হতবাক হয়েছে। বিএনপি মনে করে, সালাহউদ্দিন কাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
কিন্তু এই বক্তব্যের একদিন পরই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মিডিয়াকে বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দায় বিএনপি নেবে না।
এরই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘বিএনপির ‘মুখ’ কোনটা আর ‘পাত্র’ কোনটা বোঝা বড় মুশকিল।
এ প্রসঙ্গে ড. আসাদুজ্জামান রিপন শুক্রবার (৭ আগস্ট) বাংলানিউজকে বলেন, এটি অনেক পুরনো খবর। কেন যে আপনারা এসব বিষয় নিয়ে বার বার লেখেন তা আমরা বুঝে উঠতে পারি না। বোধ হয় আপনাদের লেখার কিছু নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বড় দলে নানা ক্যাটাগরির লোক থাকে। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। তবে দলের পক্ষ থেকে কথা বলার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়, তাদের বক্তব্যটাই দলীয় বক্তব্য হিসেবে ধরে নেওয়া ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
এজেড/এমজেএফ