শরীয়তপুর: বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সীসহ নয় জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে জেলা স্পেশাল জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আতাউর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে, ৩০ জুন আদালতে হাজির না হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বুধবার এজহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে নয় আসামি আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন।
কারাগারে পাঠানো অন্য আসামিরা হলেন- আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌরসভার বরখাস্তকৃত মেয়র আব্দুর রব মুন্সী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চিতলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার, শিক্ষক রণজিৎ, সংগীতা রানী সাহা, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আইয়ুব আলী মল্লিক, কুদ্দুস মোল্লা, সুজন সাহা ও জমির ক্রেতা জাহাঙ্গীর সরদার।
এ মামলার এজহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- সালাম সরদার, তহশিলদার মজিবুর হাওলাদার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলফাতুন্নেছা। তারা পলাতক রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৩ একর ৭১ শতাংশ জমি ছিল। যার সর্বনিম্ন বাজার দর ছিল ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা।
এ জমি বিক্রির জন্য আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহবান করেন। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে জে সরদার করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রকৃত মূল্য ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ওই জমি বিক্রি করে।
ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কামাল দাতা হিসেবে জে সরদার করপোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আবদুস সালামের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি।
২ মাস ১৮ দিন পরে ক্রেতা পক্ষ ৭০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার দু’টি আলাদা চেক দেয়। ওই চেক দু’টি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে চেকের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় এবং ক্রেতা পক্ষের ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক চেক দু’টি ফেরত দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরে, দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করে। গত বছরের ৬ আগস্ট দুদকের উপরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অসৎ উদ্দেশে পরস্পর যোগসাজশে লোভের বশবর্তী হয়ে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক গাজী শামসুল আরেফিন তদন্ত শেষে ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন আদালত অভিযুক্তদের উপস্থিতির দিন ধার্য করা হয়। অভিযুক্তরা কেউ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ৯ আগস্ট শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সীকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করে।
বুধবার ১২ আসামির মধ্যে ৯ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়েক করা মামলায় ১২ আসামির মধ্যে ৯ জনকে আদালতে হাজির করে জামিনের জন্য আবেদন করি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। জামিনের জন্য আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
এমজেড