ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠনগুলোর মধ্যে যারা সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সরকার তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকার ও দল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ. ছাত্রলীগ, যুবলীগ দল সমর্থিত সংগঠনগুলোতে যে সব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ রয়েছে বা যারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর অব্স্থান নিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যেই এদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারাদেশেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই সব সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ প্রশাসনকে এই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন বিভিন্নভাবে এই সব সংগঠনের বেপরোয়া নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিসাসহ দলের শীর্ষ নেতারা বার বার সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি এই পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীর উদ্দেশে অনেকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, এমন কিছু করবেন না, যাতে সরকারের ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
এদের শান্ত থাকার জন্য সরকার অনেক সময় দিয়েছে। অনেক ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু সরকারের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই সূত্রগুলো আরো জানায়, সরকার উন্নয়নের অনেক বড় বড় এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এ জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা জরুরি। আর এ জন্য প্রয়োজন দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন ও সহযোগিতা। তাই, দলের নেতাকর্মীদের এমন কোনো কাজে সরকার সাহায্য করবে না, যাতে জনগণ সরকারে বিরক্ত হয়। সন্ত্রাস নির্মূলে সরকার যা যা করার প্রয়োজন, সেই পদক্ষেপই নেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং সরকার ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত সোমবার (১৭ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর মন্ত্রীদের সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অপরাধী দলের হলেও ন্যূনতম কোনো ছাড় বা সহানুভূতি দেখানো হবে না।
ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রটি আরো জানায়।
এরপর গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এ ছাত্রলীগ, যুবলীগের পাঁচ নেতাকর্মীর নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বুধবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখানে কে ছাত্রলীগ, কে যুবলীগ, এটা বিষয় নয়। অপরাধীর পরিচয়, সে অপরাধী। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাবে সরকার।
আর মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।
কিছুদিন ধরে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাড্ডায় ঝুট ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তীণ দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতা হত্যা, জাতীয় শোক দিবসের দিন কুষ্টিয়ায় এক যুবলীগ নেতা হত্যা, চাঁদপুরের কচুয়ায় চাঁদার দাবিতে স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রীদের ওপর যুবলীগের হামলা, হাজারীবাগে ছাত্রলীগ নেতার এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
এর আগে মাগুরায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত ও মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এছাড়া প্রায়ই ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো কোনো সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
সূত্র জানায়, দলীয় নেতাকর্মীদের এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতায় সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। কোনো কোনো ঘটনা সরকার ও দলকে মারাত্মক অস্বস্তি ও বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছে।
এতে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারণী মহল মারাত্মক উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ নেতা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, সরকার মনে করে সন্ত্রাসীদের কোনো নেই। সেটা ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল হোক আর যুবলীগ বা যুবদল হোক। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স। সেই অনুযায়ীই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধ’-এ যারা মারা যাচ্ছে সেটা এই নিদের্শনার কোনো বিষয় না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীই। এদের কোনো দল নেই। এরা যে দলেরই হোক, এদের ক্ষেত্রে কোনো আপস নেই। কোনো ছাড় নেই।
সরকার প্রথম থেকেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তৎপর ছিল, এখনও আছে। শোকের মাস আগস্ট চলছে। আমরা ৪০ দিন ব্যাপী শোকের কর্মসূচি পালন করছি। জামায়াত-শিবির চক্র এই সময় একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সন্ত্রাসী যেই হোক, সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এসকে/এবি