ঢাকা: গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার মনিপুর খাসপাড়া এলাকায় ‘তারেক জিয়া মোড়’ এ বাস পোড়ানোর পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা হিসেবে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করার বিষয়টিকে ‘ভাদ্র মাসে আষাড়ে গল্প’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টিকে আমরা ভাদ্র মাসে আষাঢ়ে গল্প হিসেবে দেখছি।
তিনি বলেন, গত পরশু টেলিভিশনে দেশবাসী এই ভাদ্র মাসে এক আষাড়ে গল্প শুনেছেন এবং গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় তা পড়েছেন। ক্রস ফায়ারের নামে বিচার বহিভূর্ত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর যেসব গল্প বলা হয়, সেগুলো যেমন দেশবাসী বিশ্বাস করে না - এই আষাড়ে গল্পও তেমনি বিশ্বাস করেনি।
কিন্তু তারপরও সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা রাজনীতিকে কলুষিত, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেয় এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে আসীন জিয়া পরিবারের প্রতি সরকারি বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার সাম্প্রতিকতম প্রকাশ ঘটেছে গত পরশু গাজীপুর আদালতে দাখিল করা এক কল্পিত কাহিনীসমৃদ্ধ চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, চার্জশিটে ১৯ নং আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জয়দেবপুর থানার ১৮ কিলোমিটার দূরে মনিপুর খাসপাড়া এলাকায় ‘তারেক জিয়া মোড়’ এ বাস পোড়ানোর ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ গত ২১ জানুয়ারি সংঘটিত এই ঘটনার উপস্থিত সাক্ষীদের বর্ণনা অনুযায়ী ১৮ জনকে আসামি করে পুলিশ যে এফ আই আর দাখিল করেছিল সেখানে তারেক রহমানের নাম নেই। অন্যান্য অজ্ঞাত ৪০/৪৫ জনের মধ্যে তাঁর নাম আনা হয়েছে।
যিনি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, তিনি কি করে অজ্ঞাত আসামিদের একজন হতে পারেন?- প্রশ্ন নজরুল ইসলাম খানের।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী বলে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা ও একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি কখনও তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন না, এখনও নেই। তিনি কিম্বা মেয়র পুত্র মঞ্জুরুল আহসান রনি কেউই বিএনপির কোন পর্যায়ের কোন নেতা নন। কথিত আসামিরাও বিএনপি বা কোন অঙ্গদলের পরিচিত নেতা-কর্মী নন। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাদের দলের নেতা বলে জানেন না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, আমরা জানতে পেরেছি তারা সবাই এখন জামিনে মুক্ত। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র অনেক সিনিয়র নেতা, বিভিন্ন জেলা উপজেলার পরিচিত, বিশ্বস্ত ও নিবেদিত নেতা-কর্মী থাকতে যারা বিএনপি’র কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মী নন তাদেরকে বিশ্বাস করে তারেক রহমান কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবেন -এমন হাস্যকর ও উদ্ভট চিন্তাই আসলে একটা উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্র এবং তার ভিত্তিতে সাজানো অভিযোগকে আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
এছাড়াও, যে স্থানে বাস পোড়ানার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড থেকে প্রায় ৩ মাইল দূরে গ্রামাঞ্চলে। ওটা এমন কোন শিল্পাঞ্চল নয় যে, সেখানে বাস পুড়িয়ে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। কাজেই এ ব্যাপারে যে অভিযোগ চার্জশিটে আনা হয়েছে তা শুধু অযৌক্তিক নয়, হাস্যকরও বটে-বলেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ঐ অঞ্চলের জনগণ ভালবেসে একটা গ্রামীণ রাস্তার মোড়কে ‘তারেক জিয়া মোড়’ বলে ডাকে। ঐ মোড়ের নামের সঙ্গে তারেক রহমানের নামের উল্লেখ না থাকলে হয়তো তাকে জড়িয়ে এমন গল্প সাজানোর কথা সরকারের মাথায় আসতো না।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া সরকার পক্ষের বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচার না করার অনুরোধ জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আপনারা এখন তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বা ছাপাতে পারেন না। যতদিন পর্যন্ত তারেক রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তা প্রচার ও প্রকাশ না করার জন্য আমরা মিডিয়ার বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এটা নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। আশা করি আপনারা নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপোস করবেন না।
জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশে যখন লাখো বন্যার্ত মানুষ সরকারি ত্রাণ ও সহায়তার অভাবে দারুণভাবে বিপন্ন - পেঁয়াজ, মরিচসহ নিত্যপণ্যের বর্ধিত মূল্যে জনগণ যখন ভীষণ ক্ষুব্ধ, সরকারি দল এবং জোটের অভ্যন্তরীণ বিবাদে সরকার যখন বিব্রত, খুন-খারাপী যখন চরম পর্যায়ে, গুম, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শিশু হত্যা, নারী নির্যাতন এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ দখলের ঘটনা যখন সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করে দেশের জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে, তখন জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর অপচেষ্টা হিসাবেই তারেক রহমানকে কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাছির উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
এজেড/জেডএম